ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোরআনের দৃষ্টিতে সৃষ্টি ভাবনা

প্রকাশনার সময়: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৮
ছবি : সংগৃহীত

সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা এই সবুজ পৃথিবীতে আমাদের জন্মের পরপরই মৃত্যুর ক্ষণগণনা শুরু হয়। আমাদের এই অল্প সময়ের পৃথিবীর সফরটাকে রাঙাতে আমরা কী করতে পারি, এমনটা ভাবতে ভাবতেই জীবনের সিংহভাগ সময় ক্ষয় করে ফেলি।

একজন মুমিন তার এই সংক্ষিপ্ত সময়টাকে কাজে লাগাবে সর্বোচ্চ। তার প্রতিটা কাজ হবে জাস্টিফাইড। সময় অপচয় করার মতো তার কোনো জো থাকবে না। এই মূল্যবান সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য মহান রব অনেকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য মুমিন বান্দাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন। আর তার মধ্যে অন্যতম হলো, সৃষ্টির অপার নিদর্শন নিয়ে ভাবনাতে সময় কাটানো। এই কাজ আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে করতে পারবেন। যেকোনো বয়সেও করতে পারেন। এবং এই কাজ ইখলাস নিয়ে করলে ইনশাআল্লাহ সময় অপচয় হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহ অধীনস্থ করেছেন রাত্রি ও দিবসকে, সূর্য ও চন্দ্রকে। নক্ষত্ররাজি তার হুকুমের অধীন, নিশ্চয়ই এতে বহু নিদর্শন রয়েছে, যারা জ্ঞানী তাদের জন্য।’ (সুরা নহল: ১২)

এ আয়াতে যারা জ্ঞানী তাদের জন্য আল্লাহ তাঁর নিদর্শনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এই নিদর্শনাবলির মধ্যে আমাদের রব জ্ঞানীদের জন্য রেখেছেন চিন্তার বিষয়াবলি। অথচ আমরা গাফিলতির মধ্যে সময় কাটিয়ে দেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অযথা আলাপচারিতায় কাটিয়ে দিলেও আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে ভাবনায় আমাদের সময়ের প্রচণ্ড অভাব!

রব্বুল আলামিন কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজনে এবং দিন-রাতের পরিবর্তনে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। (তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয়) হে আমার প্রতিপালক! আপনি এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনি (বৃথা সৃষ্টি করার দোষ থেকে) পবিত্রতম।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯১-১৯২)

সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রতি উদ্দীপ্ত করার জন্য মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারিমের অসংখ্য জায়গায় মানুষের প্রতি সৃষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। যেমন- ‘তারা কি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল নিয়ে ভাবে না?’ (সুরা আরাফ: ১৮৫) ‘আমি কি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করি নাই? পাহাড়গুলোকে পেড়েকস্বরূপ করি নাই?’ (সুরা নাবা)

‘কোন জিনিস দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে? ... মানুষ তার খাদ্য নিয়ে ভেবে দেখুক?’ (সুরা আবাসা: ১৮-৩২) ‘আল্লাহর অশেষ দয়ার নিদের্শনাবলির প্রতি লক্ষ্য করুন। তিনি কিভাবে শুষ্ক মাটিকে পুনরায় সঞ্জীবিত করেন।’ (সুরা আর রূম: ৫০)

তিনি সুরা মূলকে তাঁর সৃষ্টির অপার সৌন্দর্যের নিখুঁত বিন্যাসের ত্রুটিমুক্ততা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘দয়াময় স্রষ্টার সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না, তোমার দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখ কি? আবার দেখ, আবারো। তোমার দৃষ্টি তোমারই দিকে ফিরে আসবে ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে।’ (সুরা মুলক: ৩-৪)

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে সহজেই বোধগম্য হয় যে, আমাদেরকে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবার দিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। আমাদেরও উচিত তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবার জন্য প্রতিদিন একটা সময় হাতে রাখা। তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে ভাবার পূর্বে দু’রাকাত নামাজ পড়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করলে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইনশাআল্লাহ আপনার ভাবনা থেকেই হয়তো নয়া পৃথিবীর দরজা উন্মুক্ত হবে।

আসুন প্রশস্ত করুন দৃষ্টিকে। রবের শুকরিয়া করুন প্রফুল্লচিত্তে। লুটিয়ে পড়ুন সিজদাতে। আর ভাবনার দরজা উন্মুক্ত করুন। ভাবুন চারপাশের পৃথিবী নিয়ে। ভাবতে পারেন বর্ষার অঝোর ধারায় বর্ষিত বৃষ্টি নিয়ে অথবা বসন্তের ভোরে ফুটে ওঠা সেই ফুটফুটে ফুল নিয়ে। আপনার পাশে বসে থাকা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাটাকে ভাবতে পারেন মনখুলে। মনকে অলস বানাবেন না। যাদের ক্বলবে অলসতা পেয়ে যায়, তারা ধীরে ধীরে জীবনের আনন্দ থেকে সরে যায়। পাপ তাদের ঘিরে ধরে।

আরও এক জায়গায় আমাদের রব বলছেন, ‘তারা কি ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করে না, যাতে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হূদয় ও শ্রুতিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারে! বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে তাদের হূদয়।’ (সুরা হজ: ৪৬)

এভাবে রাব্বুল আলামিন জ্ঞানীদেরকে চিন্তা-গবেষণার জন্য তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এবং যারা এটা থেকে দূরে থাকে তাদের অন্তরকে মৃত অন্তর বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ আমাদের সুচিন্তা করার তাওফিক দান করুন।

অবশেষে সুরা রহমানের সেই পরিচিত আয়াতটা মনে করিয়ে দিতে চাই, ‘তোমরা তোমাদের রবের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ (সুরা আর-রহমান-প্রায় ৩১ বার)

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ