মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত বা নিষিদ্ধ। আরবি পঞ্জিকার প্রথম মাস এটি। এই মাসকে আরবি বারো মাসের মধ্যে সবচেয়ে সেরা মাস হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে।
এ মাস আমাদের জন্য যেরকম সুসংবাদের তেমনি শোকেরও। এ মাসে পৃথিবীতে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার নিজের কুদরতি প্রকাশ করেছেন। এ মাসে আল্লাহ তাআলা বনী-ইসরাঈলদের জন্য নদীকে রাস্তা বানিয়ে পার করে দিয়েছেন আবার এদিকে ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীকে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন। এই মাসে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।
এই মাস আল্লাহ তাআলার কাছেও অনেক মর্যাদাপূর্ণ তাই আল্লাহর রাসুল (সা.) এর কাছেও অধিক সম্মানের। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি- যেদিন থেকে তিনি আকাশ ও নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই মাসগুলোর (সম্মান নষ্ট করে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
তাফসীরের কিতাবে বলা হয়েছে। ওই সম্মানিত চার মাস হলো মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। (তাফসীরে বাগাবী: ৪/৪৪)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাতের কোন অংশ উত্তম? এবং কোন মাস উত্তম? তিনি বলেন, রাতের মধ্যে উত্তম হলো গভীর রাত। মাসগুলোর মধ্যে উত্তম হলো আল্লাহর মাস। যেটাকে তোমরা মহররম বলে থাকো। (নাসাঈ: ৪৬১২)
এই আয়াত ও হাদিস থেকে এ মহররম মাসের ফজিলত সুস্পষ্ট হয়। তাই আমাদের প্রত্যেককে আমল করার মাধ্যমে এ মাসের সম্মান হেফাজত করতে হবে, বিনষ্ট করা যাবে না। যেই মাস আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কাছে প্রিয় ও সম্মানের হয়, একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কাছেও এ মাস সম্মানের হওয়া জরুরি।
এখন এ মাসকে আল্লাহর রাসুল ও তার প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে সম্মানিত করেছেন তা জানতে হবে এবং আমাদেরকে এ মাসের সম্মান করতে হলে কী কী করতে হবে ও বর্জন করতে হবে তাও জানতে হবে।
যেহেতু এ মাস অনেক ফজিলতের তাই আমাদের এ মাসকে সম্মান করতে হলে বেশি বেশি নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আজকার ও ইস্তিগফার করতে হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (রা.) এরশাদ করেছেন, রমজানের পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররমের রোজা আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে গভীর রাতের নামাজ। (মুসলিম: ২৬৪৫)
এ মাসে সাওয়াব অর্জনের আরেকটি সুবর্ণময় সুযোগ রয়েছে আশুরার রোজার মাধ্যমে। এ মাসের একটি দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। এ দিনটি বিভিন্ন দিক থেকেও ফজিলতের। এই দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের সাওয়াব দিয়ে থাকে, সুবহানআল্লাহ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যে আশুরার রোজায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করা হবে। (মুসলিম)
তবে এই মাসকে কেন্দ্র করে বা এ মাসের বিশেষ দিন আশুরাকে সামনে রেখে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা বা কুসংস্কার পালন করা যাবে না। আতশবাজি, তাজিয়া মিছিল বের করা, নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর মতো জঘন্য ও পরিহারযোগ্য কোনো কাজ করা যাবে না। সুতরাং একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে উচিত হলো এই ফজিলতপূর্ণ মাস মহররমকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে নিজের গুনাহ মাফ ও আমলের ভাণ্ডার সমৃদ্ধি করায় ব্যতিব্যস্ত থাকা। সব ধরণের খারাপ কাজ, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ