ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোরআন পোড়ানোর ধৃষ্টতা: সভ্য পশ্চিমাদের চরম অসভ্যতা

প্রকাশনার সময়: ০৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৬

কোরআন জগৎবাসীকে সফলতার পথ দেখায়। কোরআনের দেখানো দীপ্ত পথে হেঁটে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছে অসংখ্য বনি আদম। কোরআনের এ উপহার সবার জন্যই অবারিত। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন সব মানুষই কোরআনের মাহাত্ম্য মর্যাদার কথা স্বীকৃতি দেয় অকপটে। যারা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না, ইসলামের প্রতি অযথা বিদ্বেষ পোষণ করে কেবল তারাই কোরআন অবমাননার মতো ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কাজের স্পর্ধা দেখায়। কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।

ধর্মগ্রন্থের অবমাননা— সেটা যে কোনো ধর্মের হোক না কেন- অত্যন্ত ঘৃণিত ও নীচু মানসিকতার পরিচায়ক। সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে এটা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য। ধর্মগ্রন্থ অবমাননাকারী সর্বকালেই নিন্দিত ও সর্বজন ঘৃণিত। আর কোরআন একটি সর্বজনীন ধর্মগ্রন্থ। যেখানে পুরো মানবজাতির সফলতার দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কাজেই কোরআন অবমাননার মতো ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কাজের স্পর্ধা যারা দেখায় তারা পুরো মানবজাতির শত্রু। ওরা অসভ্যতা ও বর্বরতার ধারক। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে অগ্রগামী হলেও সভ্যতা-মনুষ্যত্বের বিচারে সফলতার পথ থেকে অনেক দূরে পড়ে থাকবে।

পবিত্র কোরআন বিশ্ব জাহানের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহতায়ালার চিরসত্য বাণী। কোরআন আল্লাহতায়ালার নাজিলকৃত সর্বশেষ গ্রন্থ, যা শাশ্বত মহাপ্রলয়কাল পর্যন্ত আগত মানব সম্প্রদায়ের জন্য মুক্তির মহাপয়গাম। সুতরাং যারাই কোরআন অবমাননার স্পর্ধা দেখায় তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে চরম দুর্ভোগ ও ভয়াবহ শাস্তি। জাহান্নাম হবে তাদের ঠিকানা।

ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী মহাপাপীর, যে আল্লাহর আয়াতের আবৃত্তি শোনে অথচ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে (নিজ মতবাদে) অটল থাকে। যেন সে তা শোনেইনি। সুতরাং ওকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও।’ (সূরা জাসিয়া: ৭-৮)

যারা কোরআনকে অবজ্ঞা করে বা কোরআন অবমাননার দুঃসাহস দেখায় সেসব দুরাচার জঘন্য পাপীকে কিয়ামতের দিন কোরআন হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কুরআন সুপারিশকারী। আর তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে কোরআনকে তার সামনে রাখবে (অর্থাৎ কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন গড়বে) কোরআন তাকে পথ দেখিয়ে দেখিয়ে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে কোরআনকে উপেক্ষা করে পিছনে রাখবে কোরআন তাকে হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে জাহান্নামে পৌঁছে দিবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১২৪)

কোরআনকে যারা সম্মান করবে, মর্যাদার আসনে স্থান দিবে তারা উন্নতির পথে আগুয়ান হবে। সম্মানের সর্বোচ্চ চূড়ায় উন্নীত হবে নিঃসন্দেহে। পক্ষান্তরে কোরআনকে যারা অবমূল্যায়ন করবে, কথায় আচরণে কাজে কর্মে যারা কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, এমনকি কোরআন অবমাননার ধৃষ্টতা দেখাবে ওরা নিঃসন্দেহে সফলতার বিমল পথ থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়বে। অপদস্ততার অতল গহব্বরে হারিয়ে যাবে। হাজার বছরের ইতিহাসের এটা জ্বাজ্জল্যমান বাস্তবতা। এ সত্যটিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পবিত্র মানুষের পবিত্র কণ্ঠে।

আমিরুল মুমিনিন ওমর ফারুক (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা কোরআনের মাধ্যমে অনেককে সম্মানিত করবেন। আর অনেককে করবেন অপদস্থ!’ (ফাজায়েলে কোরআন, আবি উবায়দ: ১/২৭৪-২৭৫)

ইউরোপ সবসময় সভ্যতার বুলি আউড়ায়। তাবত পৃথিবীকে সভ্যতার সবক দিতে চায়। অথচ প্রায়ই অসভ্যতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ভেতরে লালিত কদর্যতার পরিচয় তুলে ধরে। একজন সুস্থ সুসভ্য ভদ্র মানুষ কখনো কোরআন অবমাননার কল্পনাও করতে পারে না। কোরআন অবমাননার দুঃসাহস প্রদর্শন মূলত চূড়ান্ত অসভ্যতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। সভ্যতার ধ্বজাধারী পশ্চিমাবিশ্ব কোরআন অবমাননার এ অসভ্যতায় প্রায়ই মেতে ওঠে। মুসলমানদের হূদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে ওরা ক্রুর হাসি হাসে। বিকৃত আনন্দ লাভের ব্যর্থ চেষ্টা করে ভেতরে লালিত অসভ্যতা ও বর্বরতার জানান দেয়। কোরআনের স্পর্শ ছাড়া মানবজনম অর্থহীন।

কোরআন মানবতার সবক দেয়। মানবাধিকারের কথা বলে। আদর্শ সমাজ গঠনের নির্দেশনা দেয়। সর্বোপরি একজন সভ্য ভদ্র উন্নত রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়ার প্রেরণা যোগায়। ভদ্র আলোকিত জীবনবোধে উদ্দিপ্তকারী এই কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠী বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে শীর্ষে পৌঁছে গেলেও মনুষ্যত্বের বিচারে শূন্যেই রয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। একজন ভদ্র সভ্য মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সে আলোর পথে অগ্রগামী হবে। কমপক্ষে আলোকরেখার প্রতি ভালোবাসা লালন করবে। সে কোরআন অবমাননার ভয়ঙ্কর অন্ধকারে পা বাড়ানোর দুঃসাহস দেখানোর কল্পনাও করবে না।

কোরআনের সংস্পর্শে আসুন। কোরআনকে ভালোবাসুন। কোরআন পড়ুন। হূদয়ে ধারণ করুন। দেখুন কী সর্বজনীন তার নির্দেশনাগুলো! কী অসাধারণ তার কথামালা! আপনার যাপিত জীবনে কোরআনের নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন। দেখুন, কী অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছেন আপনি। চিন্তায় চেতনায় মননের সবটুকু জুড়ে ধারণ করুন কোরআনের অনিন্দ্য সুন্দর মনকাড়া সৌরভ। আপনার মানবজনম স্বার্থক হবে। অনাবিল অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে উঠবে আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ