ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৎ ব্যবসায়ী হওয়ার গুণাবলি

প্রকাশনার সময়: ১৩ মে ২০২৩, ০৮:২৪
ছবি : সংগৃহীত

সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা নবী-রাসুলদের অন্যতম সুন্নত। যারা সততা এবং ন্যায়নীতি ঠিক রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন, মহান আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করবেন। তাই সৎ ব্যবসায়ী হতে কী কী গুণ অর্জন করতে হবে, ব্যবসায়ীদের জন্য তা জেনে নেয়া আবশ্যক। কোরআন-হাদিসের আলোকে নিম্নে সৎ ব্যবসায়ীর গুণগুলো তুলে ধরা হলো—

পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা সৎ ব্যবসায়ীর দায়িত্ব হলো, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা। একজন সৎ ব্যবসায়ী ক্রেতা হলে নিজের জন্য যে পণ্যটি পছন্দ করতেন, তার ক্রেতাদের জন্যও ঠিক সে রকম পণ্য পছন্দ করা তার কর্তব্য। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৫০১৭)

ওজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকা

একজন সৎ ব্যবসায়ী কখনো ওজনে কম দেবে না। তার ব্যবসা যদি সেবানির্ভর হয়, তাহলে সে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কমতি করবে না। কারণ ওজনে কম দেয়ার পরিণতি ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি বিশ্বাস করে না যে তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিনে, যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১-৬)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর হে আমার সম্প্রদায়, মাপ ও ওজন পূর্ণ করো ইনসাফের সঙ্গে এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দিয়ো না। আর জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।’ (সুরা হুদ: ৮৫)

উদার হওয়া

সৎ ব্যবসায়ীদের একটি ভালো গুণ হলো, তারা ক্রেতাদের সহজ শর্ত দিয়ে পণ্য বিক্রি করে। ক্রেতাকে মানসম্মত পণ্য ক্রয় করতে সহযোগিতা করে। লেনদেন সহজ করে। যৌক্তিক কারণে কেউ পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বিক্রীত মাল ফেরত নেয়। একে-অপরকে ঠকানোর ব্যাপারে মহান আল্লাহকে ভয় করে। এতে তাদের ব্যবসার বরকত হয়। কারণ এ ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য রাসুল (সা.) দোয়া করেছেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত, আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করুন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২০৩)

পাওনা আদায়ে নম্র হওয়া উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয়কালে, ঋণ প্রদান ও আদায়কালে লোকদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করত।’ (সুনানে নাসায়ি : ৪৬৯৬)

পণ্যের গুণাগুণের ব্যাপারে সত্য বলা পণ্য বিক্রির জন্য কখনো মিথ্যার আশ্রয় না নেয়া। আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখিরাতে) নবী, সিদ্দীক (সত্যবাদী) ও শহিদদের সঙ্গে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি: ১২০৯)

সৎ ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য ঈমান নিলামে তুলবে না, তারা সর্বাবস্থায় সততা বজায় রেখে ব্যবসা করে, বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাদের ব্যবসায় বরকত দেন।

বেশি কসম থেকে বিরত থাকা অনেকে আছে ক্রেতার বিশ্বাস অর্জনের জন্য বেশি বেশি কসম করে। ইসলাম তা পছন্দ করে না। এতে ব্যবসার বরকত উঠে যায়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা সৎকাজ এবং তাকওয়া ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর নামের শপথকে অজুহাত করো না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : বাকারা: ২২৪)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘কসম মালের কাটতি বাড়িয়ে দেয়; কিন্তু আয় কমিয়ে দেয়।’ (সুনানে নাসায়ি: ৪৪৬১)

ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা সৎ ব্যবসায়ীর অন্যতম গুণ হলো, ওয়াদা ও আমানত রক্ষার ব্যাপারে শতভাগ যত্নবান হওয়া। পবিত্র কোরআনে সব মুমিনকে এই গুণগুলো অর্জনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা) আর যারা রক্ষা করে নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি।’ (সুরা মুমিনুন: ৮)

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ এই গুণগুলোকে সফলতার চাবিকাঠি আখ্যা দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা লেনদেনের ক্ষেত্রে বহু লোকের সঙ্গে ওয়াদাবদ্ধ থাকেন, অনেকের আমানত তাদের কাছে থাকে, এ বিষয়গুলো খুব যত্নের সঙ্গে রক্ষা করা একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণ।

কর্মচারীর সঙ্গে সদাচার নিজ নিজ কর্মচারীর সঙ্গে কৃত ওয়াদা রক্ষা, তাদের হক ঠিকভাবে আদায় করাও একজন সফল ব্যবসায়ীর গুণ। কারণ ব্যবসায়ীর এগিয়ে চলার পথে তাদের শ্রম-ঘাম রয়েছে। তাদের ঠকিয়ে কোনোভাবেই সৎ ব্যবসায়ীর কাতারে থাকা সম্ভব নয়। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিটি বান্দা থেকেই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত নেবেন। এরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৪) লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ