ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
সন্তানের উদ্দেশে লোকমান হাকিমের উপদেশ

কোনো আমলকে ছোট ভাববে না

প্রকাশনার সময়: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:০৭

‘হে বৎস, যদি (তোমার) কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণ (ছোটও) হয় এবং তা যদি কোনো শিলাখন্ডের ভেতর কিংবা আসমানসমূহেও (লুকিয়ে) থাকে অথবা (যদি তা থাকে) জমিনের ভেতরে, তাও আল্লাহ তায়ালা (সেদিন সামনে) এনে হাজির করবেন; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা লোকমান: ১৬)

এই নসিহতের মূল বক্তব্যই হচ্ছে কোনো আমলকে ছোট করে দেখা যাবে না। ছোট করে দেখার সুযোগই নেই। কেননা আল্লাহর নিকট ছোট আমলের গুরুত্ব বড় আমলের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। আল্লাহ কেয়ামতের দিন আমাদের ছোট আমলগুলোকেও (যেখানেই থাকুক না কেন) আমাদের সামনে এনে হাজির করবেনই। এ বিষয়টিকেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে লোকমান (আ.) সন্তানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।

আমরা আমাদের সন্তানদেরকে এভাবে বোঝাতে পারি— দেখো, আমার আব্বু! কোনো আমলকে ছোট মনে করবে না। এমনকি থুথু ফেলার সময়, আবর্জনা ফেলার সময় সচেতন থাকবে যেন তোমার ফেলা থুথু কিংবা আবর্জনা অন্যের কষ্টের কারণ না হয়। রাস্তায় কষ্টদায়ক কিছু দেখলে তা সরিয়ে দিবে।

কখনও যেন এমন না হয় যে, তুমি বৃষ্টির সময় ছাতা দিয়ে যাচ্ছ অথচ তোমার পাশের লোকটি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন। কখনো কারো সামনে দেখিয়ে দেখিয়ে এমন কোনো খাবার খেও না যা তুমি তাকে দিতে পারবে না। কারণ সে হয়তো তোমার খাবার দেখে তার না খেতে পারার জন্য আপসোস করবে, মনে কষ্ট পাবে। ফলে এসব আমলকে কখনো ছোট মনে করে এড়িয়ে যেও না বরং গুরুত্বের সঙ্গে নিও।

আবার, কখনো কারো সামনে বিশেষ করে মুরুব্বি কিংবা বড়দের সামনে পায়ের ওপর পা রেখে বসো না। এটা অনেক বড় বেয়াদবি এবং অহংকারপূর্ণ আচরণ বটে। এছাড়া, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করবে, নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করবে। মাঝে মাঝে তাদেরকে তোমার বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে কিংবা তাদের বাসায় খাবার দিয়ে পাঠাতে চেষ্টা করবে।

আমাদের নবী কারিম (সা.) মানুষদের হাদিয়া অর্থাৎ গিফট দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। তোমরা মানুষকে গিফট দেয়ার আমল করার চেষ্টা করবে। এতে একে অপরের প্রতি আরও মায়া-মহব্বত বাড়বে, সুন্দর সম্পর্কও গড়ে উঠবে। প্রতিবেশীর প্রতি সবসময় খেয়াল রাখবে যেন তোমাদের কোনো আচরণে তারা কোনোভাবেই কষ্ট না পান।

কেউ বিপদে পড়লে তোমরা সাহায্য এগিয়ে আসবে। টাকা-পয়সা দিয়ে না পারলে অন্তত সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে। তা-ও সম্ভব না হলে অন্তত হাসিমুখে সান্ত্বনামূলক কিছু কথা বলবে। কারো বিপদের সময় এমন কোনো আচরণ করো না যে আচরণে বিপদগ্রস্ত মানুষের বিপদ আরো বেড়ে যায়। বিপদ বড় মছিবতের বিষয়। যারা বিপদের সম্মুখীন হয় তারাই এই বিষয়টি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারে। ফলে বিপদের সময় মানুষের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করবে।

একইভাবে, কোনো রোগীর সঙ্গে এমন কোনো কথা বলো না যে কথায় তার রোগ আরও বেড়ে যায় কিংবা তার দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। তাদের সঙ্গে অভয় দিয়ে কথা বলবে। তোমার সামান্য সুন্দর কথা-বার্তা একজন বিপদগ্রস্ত মানুষের বিপদ কিংবা রোগাক্রান্ত মানুষের রোগ অনেকখানিই লাঘব করে দিতে পারে। ফলে এ বিষয়টি খেয়াল রেখ। আর মানুষের সঙ্গে এমনভাবে হাসি মুখে চলো, এমন আচরণ কর যেন সবাই তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকে। তোমার অনুপস্থিতি যেন মানুষকে তোমার উপস্থিতির কথা ভাবিয়ে তোলে।

কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করো না। অযথা দোষারোপ করো না। গিবত বা পরচর্চা করো না। কেউ কোনো ভুল করলে ভালোবাসা দিয়ে সংশোধন করে দিও। অন্যের সামনে লজ্জা দিয়ে ভুল ধরতে কিংবা সংশোধন করতে যেও না। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় সবসময় হাসি মুখে কথা বলবে, সম্মান করে কথা বলবে, বিনম্রতা বজায় রাখবে, গম্ভীরতা পরিহার করবে। এতে সদকার সওয়াব পাবে। এছাড়া, কোনো রিকশাচালক বা যেকোনো মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার আগে একটিবার ভাববে— এই আমলটিই কিন্তু একদিন আল্লাহ তায়ালা তোমার সামনে এনে হাজির করবেন।

আর সেদিন এমন বদ আমলের জন্য তোমাকে কতই-না অপমানিত হতে হবে। নিন্দিত হতে হবে। আর এগুলো ছোট আমল হলেও কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমস্ত ছোট ছোট আমল আমাদের সামনে এনে হাজির করবেন। ফলে তোমাদেরকে বড় আমলের পাশাপাশি ছোট আমলগুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ছোট আমলগুলো যেন আমাদের কারো নিকট কোনোভাবে অবহেলিত না থাকে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ