ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পথশিশুদের শিক্ষাদানে ধর্মীয় মহলের দায়িত্ব

প্রকাশনার সময়: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৪

সদরঘাট থেকে গুলিস্তান যাওয়ার পথে মালিটোলায় জ্যামে বসে আছি। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ল অপ্রীতিকর এক দৃশ্য। আট থেকে দশ বছরের এক শিশু দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে। সিগারেট ধরানো শেষে এক দৌড়ে কোথায় যে হারিয়ে গেল আর খুঁজে পেলাম না। ছেলেটির দৌড় দেওয়া দেখে বুঝা যাচ্ছিল শৈশবের দুরন্তপনায় আচ্ছন্ন একটি শিশু ভাগ্যের নির্মমতায় অকালে চারিত্রিক অধপতনের শিকার হলেও তার শিশুসুলভ আচরণ হারায়নি।

এমন ঘটনা ঢাকা শহরে একটা নয়। অলিগলিতে প্রায়ই দেখা যায়।

এদেশের পথশিশু ও শিশুশ্রমিকরা সার্বিক সুযোগ সুবিধা থেকে যেমন বঞ্চিত থাকে বলে তারা জড়িত হয়ে পড়ে অবৈধ নিষিদ্ধ কিছু কাজের সঙ্গে। যে বয়সে স্কুলের ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল সে বয়সে বস্তা ঘাড়ে নিয়ে বোতল কুড়িয়ে যখন একবেলা পেটের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় তখন তার চোখে এই পৃথিবী আর দশটা শিশুর মতো রঙিন না সেটা অনুমান করাই যায়। তাই কখনো তারা অসাধু কালপিটদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হয় আবার কখনো নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে নানা অনৈতিক কাজকর্মে। ফলে খবরের কাগজ আর সংবাদ মাধ্যমে মেয়ে পথশিশুদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির কথা আর ছেলেদের মাদক সেবন ও মাদক কারবারির খবর প্রায়ই চোখে পড়ে।

স্বাভাবিকভাবেই এমন পথশিশু ও শিশুশ্রমিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপদ বাসস্থান ও শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের যত্ন করে ভালো একটি জীবন উপহার দিতে না পারলে কালের পরিক্রমায় তারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকির কারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা অসাধু লোকেরা এ ধরনের শিশুদের দিয়ে কৌশলে অপরাধ সংঘটিত করায়। এক্ষেত্রে তাদেরকে ইসলামের শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।

ইসলামের মৌলিক শিক্ষা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই দরকার। তবে পথশিশুদের ব্যাপারে আলাদা করে বলার কারণ হলো অন্য আরো দশটা শিশুদের মতো পারিবারিকভাবে শিক্ষার সুযোগ থাকে না তাদের। আবার সমাজ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সামাজিক রীতিনীতিও তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে না। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত সব জায়গায় হলেও এসব শিশুরা দাওয়াতের আওতার বাইরেই থেকে যায়। মূলত আলাদা করে তাদেরকে দ্বীন ইসলাম শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলার এটাও একটি কারণ।

এক্ষেত্রে মসজিদভিত্তিক উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারে। একটি মসজিদের আওতায় যতজন পথশিশু ও শিশুশ্রমিক পাওয়া যাবে তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্ব মসজিদ গ্রহণ করবে। তাছাড়া ঢাকা শহরের মাদ্রাসাগুলোর বড় বড় ছাত্রদের দ্বারা পথ-মাদ্রাসা নাম দিয়ে ফুটপাতে ফ্রিতে এসব শিশুর কোরআন-হাদিস ও নামাজ রোজাসহ ইসলামের মৌলিক শিক্ষাদানের সুব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে তারা ইসলাম ধর্মের মহান দীক্ষায় দীক্ষিত হবে অপরদিকে দ্বীনের এই শিক্ষা তাদেরকে অনৈতিক কাজকর্ম থেকে বিরত রাখতে ভূমিকা পালন করবে।

পথশিশুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে থাকা খাওয়া ও পড়াশোনার বন্দোবস্ত হোক এটা একান্ত কাম্য। তবে সবকিছু রাষ্ট্রের ওপর ছেড়ে না দিয়ে আমাদেরও উচিত কিছু দায়িত্ব পালন করা। বরং এর দায় কিছুটা হলেও আমাদের ওপর বর্তায়। যেহেতু ইসলামে প্রতিটা নর-নারীর ওপর দীনের জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ সেহেতু পথশিশুদের জন্য আর কিছু করি আর না করি দীনি জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা আমরা করতেই পারি। এটা আল্লাহর পথের দাঈ ও মুবাল্লিগদের দাওয়াতের বড় একটি ক্ষেত্র। পথশিশুদের ধর্মীয় দীক্ষায় দীক্ষিত করার এই উদ্যোগ আমাদের উভয় জাহানের কামিয়াবির কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ