থার্টি ফার্স্ট নাইট- ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতের ১২.০১ মিনিটের মুহূর্তকে বলা হয় । আমরা এটাকে ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে জানলেও মূলত তা ইংরেজি নববর্ষ নয়; বরং এটা খ্রিষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। যার সঙ্গে মিশে আছে খ্রিষ্টাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি। এর নামকরণও করা হয়েছে খ্রিষ্টানদের ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরিয়ানের নামানুসারে। ইতিহাসবিদরা বলেন, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার প্রথম ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। পরে তা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন ইসলামে বৈধ নয়। ইসলামি আইনবিদরা একে হারাম বলে আখ্যায়িত করেন। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি-উৎসব মুসলমানের জন্য উদযাপন করা জায়েজ নেই। নিজ ধর্ম ও অন্যের ধর্মের কালচারকে ঘুলিয়ে একাকার করতে বারণ করা হয়েছে হাদিসে। নবী (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি যে জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে, সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত।’(মিশকাতুল মাসাবিহ : ৪৩৪৭)
অন্য ধর্মের সভ্যতা-সংস্কৃতি গ্রহণ না করার জন্য এ হাদিসে মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করা হয়েছিল। আর গ্রহণ করলে মুসলমানিত্ব হারানোর হুশিয়ারিও প্রকাশ পেয়েছে উপর্যুক্ত হাদিসটিতে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের নামে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, লিভটুগেদার, মদ-মাস্তি, গান-বাদ্য চলে রাতভর। এ উৎসবে অতীতে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণও রয়েছে অনেক। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও বলবে থার্টি ফার্স্ট নাইট কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এতে কেবল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে, ধর্মপালন ও দেশজ সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতেও থার্টি ফার্স্ট নাইট পরিহারযোগ্য।
এ সংস্কৃতি উদযাপন করতে গিয়ে সম্প্রতি নির্লজ্জতা ও ছেলে-মেয়েদের বাড়াবাড়ি সবার নজরে পড়েছে। এমন অশ্লীলতা থেকে মেয়েদের সাবধান ও সতর্ক করেছে ইসলাম। থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে রাতভর চলে অশালীন ও বেহায়পণার মহোৎসব। অথচ ইসলাম এটাকে নিষেধ করেছে।
নারীর নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য করে ইসলাম এ উৎসবে মত্ত হতে বারণ করে। জরিপে দেখা যায়, এ উৎসবে যুবতী মেয়েদের পোশাক ও আবেদন ইতিবাচক থাকে না। কিংবা প্রতারিত হতে তারা বাধ্য হন। তাই ঘর থেকে বের হওয়ার আগে মেয়েদের ভাবতে হবে।
যেসব কারণে ইসলাম বারণ করে
অশ্লীলতা : এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেন, ‘ওইসব নারী যারা হবে পোশাক পরিহীতা কিন্তু নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উচুঁ কাঁধ বিশিষ্ট উটের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।’(সহিহ মুসলিম : ২১২৮)
গান-বাজনা : এ রাতে আয়োজিত হয় বিভিন্ন কনসার্ট। যেখানে নারী পুরুষের একসঙ্গে গান-বাজনা, নগ্ন নৃত্য আবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ও রাসুল (সা.) এসব নিন্দনীয় কাজকে সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। আর যারা এসব কাজে লিপ্ত তাদের জন্য করেছেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ করেন, ‘একশ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লুকমান : ৬)
আতশবাজি ও পটকাবাজি : এ রাতে আনন্দ উল্লাস উপভোগ করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজিও পটকাবাজি। যা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা অগ্নিসংযোগেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জনসাধারণকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)
অর্থ অপচয় : এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা একদিকে যেমন মারাত্মক গুনাহের কাজ অপর দিকে অপচয়। আর ইসলাম অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের বড়ই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৭)
আমাদের মনে রাখতে হবে, উৎসব হচ্ছে একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধ। সে জন্যই নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসব নির্ধারণ করে গেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (খুশি) রয়েছে, আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) আমাদের ঈদ।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
তাই মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন থেকে বিরত থাকা। একে কেন্দ্র করে সকল প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড় এবং নগ্নতা প্রদর্শনকে এড়িয়ে চলা।
পাশাপাশি বছরের সূচনালগ্ন যখন আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়, তখন আমাদের করণীয় হলো, যে বছরটা আমাদের জীবন থেকে গত হয়ে গেল, তা কোন কাজে ব্যয় করলাম তার হিসাব করা, ভুলত্রুটির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। সামনের দিনের কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পণ করা ।
লেখক : ইমাম ও খতিব, আদ্রা জামে মসজিদ, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ