আমরা অনেকেই শীতের পোশাক থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর শীত এলেই শীতের নতুন পোশাক কিনি। সামর্থ্য থাকলে কিনতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু পাশাপাশি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না— হাড়কাঁপানো শীতের সময় রাস্তার অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ শীতের পোশাকের অভাবে বহুকষ্টে রাত্রিযাপন করছে। দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষত উত্তরবঙ্গের মঙ্গাকবলিত দরিদ্র এলাকার লোকদের দুর্দশা অবর্ণনীয়। আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে আসুন না বেশি না শীতার্ত মানুষের জন্য পাঁচশত টাকা বরাদ্দ করি।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘যারা দিবারাত্রে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ধন দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। সুতরাং তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সূরা বাকারা: ২৭৪) আলোচ্য আয়াতে যারা সর্বাবস্থায় দান করে তাদের জন্য অপরিমেয় পুরস্কার এবং পরকালে নিরাপদ নির্বিঘ্ন জীবনের ঘোষণা করেছেন।
বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারীকে আল্লাহ শুধু একটি পিপাসিত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। হতে পারে এই ক্ষুদ্র দানও যদি আমরা শুধু আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য করি এজন্য কালকেয়ামতের ভয়াবহ দিনে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে (আল্লাহ তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্বশাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়।’ (বুখারি: ১৪১০)
শীতের আগমনে আমাদের ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শীতে আমরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। অথচ আমাদের আশপাশেই হয়তো কত মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়, আমরা খবরও রাখি না। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ বলবেন:
‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনি তো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’
‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্বপালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তাহলে আজ তা প্রাপ্ত হতে’। ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’
বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তাহলে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম: ৬৭২১)
আজ মানুষের মধ্যে যান্ত্রিক সভ্যতার অতিমাত্রিক চর্চা মানবিক বোধগুলোকে খেয়ে ফেলেছে। অসীম আবেগে চর্চিত ভোগ ও স্বার্থের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সততার সব বুনিয়াদ। পরস্পর আস্থা, নির্ভরতা ও হূদ্যে প্রতিষ্ঠিত শান্তির সমাজ যদি আমরা চাই, অন্তত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, তাহলে আমাদের মাঝে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে ইসলামের সোনালি যুগের মানতাবোধের বহুমুখী শিক্ষা।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ