আল্লাহর কোরআন সর্বাধিক পবিত্র ও সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। তাই কোরআনের পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য দৈহিক পবিত্রতার শর্তারোপ করা হয়েছে। যেন কোরআন স্পর্শ করার ও তা পাঠ করার ক্ষেত্রে কোনো অসম্মান প্রকাশ না পায়।
আবদুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাজম বলেন, রাসুল (সা.) আমর বিন হাজমের কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কোরআন কেউ স্পর্শ করবে না।’ (মুয়াত্তা মালিক : ৬৮০)
আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫১২)
ইমাম নববি ও ইমাম তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘পবিত্র হওয়া ছাড়া কোরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ— এই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন আলী, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, সালমান, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) প্রমুখ সাহাবি। অন্য সাহাবিদের এর বিপরীত কোনো অভিমত নেই।’ (শরহুল মুহাজ্জাব : ২/৮০)
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা যাবে না—এ বিধানের ক্ষেত্রে চার মাজহাবের কোনো আলেমের দ্বিমত নেই। তবে হ্যাঁ, বিধানটি কোরআনে কারিমের আয়াত দিয়ে প্রমাণিত নাকি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত—এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা যায়। কোরআনের যে আয়াত নিয়ে এ মতপার্থক্য সেটি হলো , যারা পূত-পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা (কোরআন) স্পর্শ করে না। ’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৭৯)
ইবনে আব্বাস ও আনাস (রা.) বলেন, এই আয়াত দিয়ে লওহে মাহফুজের কোরআন ও ফেরেশতা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এখানে মানুষের কথা বলা হয়নি, ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে। আর সালমান ফারসি (রা.)সহ অনেক তাবেয়ির অভিমত হলো, এই আয়াতে জমিনে অবতীর্ণ কোরআনই উদ্দেশ্য এবং এর মাধ্যমে কোরআন স্পর্শ করতে পবিত্রতার বিধান প্রমাণিত হয়। (তাফসিরে তাবারি : ২৩/১৫০)
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আমাদের কাছে যে কোরআন আছে, এটি সেই কোরআনই, যা লওহে মাহফুজে আছে। কোরআন কোরআনই, যদিও তা গাছের পাতা, পশুর চামড়া, পাথর বা কাগজে লেখা হয়। সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্রতা ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, একইভাবে জমিনে থাকা কোরআনের ক্ষেত্রেও একই বিধান আবশ্যক। কেননা এ কোরআনের সম্মান সে কোরআনের মতোই। (শরহুল উমদাহ : ১/৩৮৪)
অতএব, যিনি কোরআন স্পর্শ করতে ইচ্ছুক— তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। না হয়, তাকে গুনাহগার হতে হবে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ