সালাম ইসলাম ধর্মের নিদর্শন। মুসলমানদের সাক্ষাতের প্রথম সম্বোধন। কথা সূচনার উৎকৃষ্ট মাধ্যম। সালাম পরস্পরের ভেতর অন্তরঙ্গতা ও হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। ভালোবাসার সৌধ নির্মাণ করে। মান-অভিমান, ঝগড়া-ফাসাদ ভুলিয়ে দেয়। সমাজে বইয়ে দেয় শান্তি ও সুন্দরের সমীরণ। এত সুন্দর অর্থবহ মোহনীয় সম্বোধন ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মে নেই। ইসলাম ভিন্ন ধর্মে পরস্পর মিলনের প্রথম সম্ভাষণে ধর্ম মতে যে বাণী রয়েছে, এতে প্রাণ নেই। আবেগ নেই। ভালোবাসা নেই। মহান মালিকের দরবারে ব্যক্তির জন্য কল্যাণ প্রার্থনা নেই। অথচ ‘আসসালামু আলাইকুম’ (তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) শব্দটি দ্বারা ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি কামনা করা হয়।
সুন্দর সমাজ নির্মাণে সৃজনে সালামের ভূমিকা রাতের আকাশে তারার মতো। সমাজ সভ্যতার প্রধান বিদ্যা হলো, সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি বলেন, ‘তুমি লোকদেরকে খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে সালাম করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭)
অনেকেই মনে করেন, খাওয়ার সময় সালাম দেয়া যায় না। আবার অনেকে তো বলে, ‘খাওয়া আর কোরআন পড়া সমান, তাই এ অবস্থায় সালাম দেয়া যাবে না।’ এ বিষয়ে অনেকেই আমাদের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন।
কোরআন-হাদিসের আলোকে আলেমদের অভিমত হলো, খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে এবং নেওয়া যাবে। প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে যে, ‘খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেয়া যাবে না’ এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে যদি কারও মুখের ভেতরে খাবার থাকে, তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভালো। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিলে উত্তর প্রদান ওয়াজিব নয়। (সাখাবী, আল মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০)
‘খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে না,’ এমন কোনো কথা হাদিসের কিতাবে নেই।
ইমাম নববী (রহ.) তাঁর আজকার কিতাবে বলেন, খাবার চলাকালীন মুখে খাবার থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেওয়া জরুরি নয়। তবে যদি মুখে লোকমা না থাকা অবস্থায় সালাম দেয় তাতে কোনো সমস্যা নেই এবং উত্তর প্রদান জরুরি।
শায়খ আব্দুর রহমান আস সাহিম বলেন, সমাজে প্রচলিত খাবার সময় সালাম দেওয়া যায় না বলে যে কথাটি রয়েছে তা সালামের ব্যাপারে নয়, মোসাফাহার ব্যাপারে। সুতরাং সালাম দেওয়া ও নেওয়াতে কোন সমস্যা নেই। (দেওবন্দ ফতোয়া : ১০১৬৬ )
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ