ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীতকাল মুমিনের বসন্ত

প্রকাশনার সময়: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৫৫

সময়ের গতিধারায় প্রকৃতির ওপর বয়ে যাওয়া ঋতুবৈচিত্র্য এক ছন্দায়িত তরঙ্গ। সেই তরঙ্গ-ছন্দের পরতে পরতে নিসর্গ পায় নতুন রূপ; সজ্জিত হয় নতুন সাজে। তাই আমরা দেখতে পাই— প্রকৃতির আকাশ কখনো নীল, কখনো কালো মেঘাবৃত, কখনো বা টুকরো টুকরো সাদা মেঘে ভরা; ধরার মাটি কখনো স্যাঁতস্যাঁতে, কখনো কোমল নরম, কখনো বা ফেটে চৌচির। এই ঋতু পরিক্রমা একেক দেশে একেক রকম হলেও আমাদের ‘সবুজ দেশ’ পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

এ দেশে গুণে গুণে দু’মাস করে বারো মাসে ছয়টি ঋতু। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। প্রতিটি ঋতুরই রয়েছে নিজস্ব রূপ চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য। আমাদের চলতি মৌসুম শীত। হেমন্ত বিদায় নিলে আত্মপ্রকাশ করে হিম। পৌষ ও মাঘ মিলে হিম ও শীতের দেহ। এ দু’মাস ও শীতকে ঘিরে লোকপ্রবাদও আছে— পৌষের শীত মহিষের গায়ে লাগে, মাঘের শীত লাগে বাঘের গায়ে। শীতকালের নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে কত সাহিত্যিক কথার মালা গেঁথেছেন, কত কবি কবিতা লিখেছেন, কত গায়ক গান গেয়েছেন, কত শিল্পী ছবি এঁকেছেন তার হিসেব বোধহয় কেউ রাখেনি!

তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধর্মীয় দিক থেকেও এ শীতঋতুর মাহাত্ম্য অনেক। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্ত। এ মৌসুমে দিন ছোট হয়, তাই সে (সহজে) রোজা রাখতে পারে এবং রাত লম্বা হয়, তাই সে (প্রয়োজনীয় ঘুম সেরে নেয় অনায়াসে) তাহাজ্জুদ পড়তে পারে।’ (বাইহাকি: ৪/২৯৭)

আমের ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘শীতকালের রোজা আকর্ষণীয় গনিমত (তথা কষ্টহীন অর্জিত সম্পদ)।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪/৩৩৫)

আবু উসমান বলেন, উমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতের মৌসুম ইবাদতকারীর জন্য গনিমত।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯/৩০২)

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি কি তোমাদের আনন্দঘন গনিমতের কথা বলব? শ্রোতা জিজ্ঞেস করেন, হে আবু হুরাইরা! কী সেই গনিমত? বললেন, ‘ঠান্ডার দিনে রোজা রাখা।’ (বাইহাকি: ৪/২৯৭)

ঋতুভেদে একজন রোজাদারের ইফতারির আয়োজন কী হবে সে বিষয়েও ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শীতকালে খেজুর দিয়ে আর গ্রীষ্মকালে পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (তিরমিজি: ৬৯৬)

তাই শীতকালে ইফতারির আইটেমে ফল-ফ্রুট থাকা এবং গরমকালে শরবত ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকা ভালো। ত্যাগ ও কষ্টের ভিতর দিয়ে যে ইবাদত সম্পাদিত হয়, আল্লাহর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। এজন্য শীতকালের অজুকে অন্য মৌসুমের তুলনায় উত্তম বলা হয়েছে। হিমঋতুতে বিশেষত প্রচণ্ড শীতের সময় মানুষের অজু করতে স্বভাবতই একটু কষ্ট হয়, তাই হাদিসে আল্লাহর শত্রুর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ করা, বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা প্রভৃতি ছয়টি পছন্দনীয় কাজের মধ্যে ‘উত্তমরূপে অজু করা’র বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। (শুআবুল ঈমান: ৩/২১)

মুআয (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘শীতকালে মানুষের অন্তর নরম ও কোমল থাকে। কারণ, মানুষকে আল্লাহ মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর এ মৌসুমে মাটি থাকে কোমল ও নরম।’ (সুয়ুতি রচিত জামে সগির: ৩/২৫৮)

প্রাকৃতিকভাবে শীতের মৌসুমে মানব-হূদয় কোমল থাকলেও দুঃস্থ অসহায় বস্ত্রহীন আর্তমানবতার জন্য আমাদের বিত্তশালীদের পাষাণ মন যেন বিগলিত হয় না! শীতকালটা ইবাদত-আগ্রহী মুমিনের জন্য বসন্ত হলেও দুঃস্থ মানবতার বিচারে ফেরেশতাদের নিকট তা বড় অস্বস্তিকর। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘শীতকালে গরিব অসহায় মুসলমানের ওপর যে দুঃখ-দুর্দশা বয়ে যায় সেই বিবেচনায় এ মৌসুমটা চলে গেলে ফেরেশতাগণ খুব বেশি খুশি হন। (তাবরানি সূত্রে কানযুল উম্মাল: ১৩/২৬)

আমাদের উচিত, শীতবস্ত্র নিয়ে অনাথ-অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে শিশিরভেজা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ শীত মৌসুমকে সবার জন্য আনন্দঘন করে তোলা!

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ