যে ভবনের বেসমেন্ট যত শক্তিশালী হয় সে ভবন তত মজবুত হয়। আর যেকোনো দেশের বেসমেন্ট হলো সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। যেদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যত উন্নত, যত আধুনিক ও যত যুগোপযোগী সে দেশ তত উন্নত।
উদাহরণ হিসেবে আমরা ইসরায়েলকে দেখতে পারি। ইসরায়েল বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তাদের আছে বিশ্ব বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। যা প্রত্যেকটি দেশের মাথা ব্যথার কারণ।
এর পেছনের কারণ কী জানেন? ইসরায়েল জনগণ শুধু শিক্ষিতই নয় বরং ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
সেখানে আমাদের দেশের শিক্ষার হার মাত্র ৭৪.৭০ শতাংশ যেখানে গোটা পৃথিবীর গড় সাক্ষরতার হার ৮৪.১ শতাংশ।
তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বই দিচ্ছেন, শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছেন। শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে এর সুফল পেতেও শুরু করেছি।
তবে মানুষকে শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না। পাশাপাশি অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে।
সনদ সর্বস্ব বেকার বানিয়ে যেমন কোন লাভ নেই তেমনই বৃহৎ জনগণকে অশিক্ষিত, অন্ধকারে রাখলে তার পরিণাম আরো ভয়ংকর।
সেক্ষেত্রে কর্মমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষার দিকে নজর দেয়ার কোন বিকল্প নাই। সেই সাথে বিশাল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীর কাজের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে যেকোনো মূল্যে।
বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্কালে আমাদের নতুন প্রজন্মকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশগ্রহণে উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
নজর রাখতে হবে এমবিবিএস পাস করে কেউ যেন পুলিশ ক্যাডার না হয় কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কেউ জেনো প্রশাসক না হয়। সেক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই ম্যারিট যাচাই-বাছাই করে মেধা অনুযায়ী কর্ম নিশ্চিত করে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করা যেতে পারে।
এখানেই সামনে আসবে শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের গড়তে হলে আগে শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা দিতে হবে। সকল সুযোগ সুবিধায় শিক্ষকদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
সর্বোপরি শিক্ষকদের হতে নিরপেক্ষ, তাদের কাজ থাকবে ইতিহাস বিকৃত নয় বরং সঠিক ইতিহাস জানিয়ে, সঠিক শিক্ষা দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আদর্শিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
যে সকল শিক্ষকদের অবসরের পরে পুলিশ পাহারায় বাসায় যেতে হয় কিংবা ছাত্রদের ভয়ে প্রোটেকশন নিয়ে চলতে হয় তারা শিক্ষক সমাজের লজ্জা। আবার যে সকল ছাত্ররা শিক্ষকদের তুলে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয় তারাও ছাত্রসমাজের কলঙ্ক।
বরং আমাদের জন্য অনুসরণীয় ভারতের কেরালা রাজ্যের ওই স্কুল শিক্ষক যিনি সরকারি নির্দেশনায় প্রমোশন নিয়ে অন্যত্র বদলির সময় তার শিক্ষার্থীরা মানব ঢাল তৈরি করে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে সরকারকে ওই প্রতিষ্ঠানেই সেই শিক্ষককে রাখতে হয়।
সবার শেষে শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা।
রাজমিস্ত্রীর ঘামে যেমন ইটের পর ইট জোড়া লেগে বড় বড় দালান তৈরি হয় তেমনই শিক্ষকদের ঘামে তৈরি হয় একটা দেশের সমাজ, সভ্যতা ও জাতি। তাইতো শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষকরাই হলো সে মেরুদণ্ডের মিস্ত্রি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ