ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মশার উৎপাত কমাতে হবে

প্রকাশনার সময়: ১০ মার্চ ২০২২, ১৪:৫৫

চতুর্মুখী চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশবাসী। একদিকে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। অন্যদিকে দিনে-রাতে মশার সীমাহীন উপদ্রব। যত দিন যায় আশায় আশায় কেবল দিন কাটে। সমস্যার কোনো সমাধান হয় না। ঢাকাবাসীকে শতভাগ সেবার আশ্বাস দিয়ে দুই ভাগ হলো সিটি করপোরেশন। জনগণ আশা করলেন, এবার দুই নগরপিতা শতভাগ না হোক মূল সমস্যাগুলোর সমাধান নিশ্চয়ই করতে পারবেন; কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি।

ঢাকা থেকে মশার উপদ্রব কমেনি, যানজট কমেনি, ধুলোবালির অত্যাচার কমেনি, গণপরিবহনের সমস্যার সমাধান ঘটেনি। এরকম আরো বহু উদাহরণ রয়েছে যেসবের আশ্বাস আছে, বাস্তবায়ন নেই। প্রতি বছর একই সমস্যার উদ্ভব ঘটছে, একই প্রতিশ্রুতি মিলছে, ফলাফল শূন্য। নতুন করে সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানো হলেও বাড়েনি নাগরিকসেবা। বরং আগের মতোই গ্রাম্য পরিবেশে বসবাস করছে নতুন যুক্ত হওয়া সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা। ইউনিয়ন পরিষদে থাকা অবস্থায় যেটুকু সুবিধা পেত, এখন তাও বন্ধ। কর্তৃপক্ষ বলছে বরাদ্দ নেই, লোকবল নেই। তাহলে মূল চাহিদা পূরণ না করে পরিধি বাড়ানোর কী দরকার ছিল— এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।

মশার অত্যাচারে নগরবাসী এখন দিশেহারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ মশার অত্যাচারে তারা টেবিলে বসতে পারছে না। নামাজে গেলে নাক, মুখ দিয়ে মশা ঢুকে পড়ছে। বাস, গাড়িতে উঠলে মশার কামড়ে বসা দায়। মশা মারার কয়েল, স্প্রে বা অন্যান্য সামগ্রীতে মশা তো মরেই না, বরং জনস্বাস্ব্যের জন্য তা আরো ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। অথচ মশানিধনের ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনই নীরব এমন অভিযোগ উঠেছে।

মশানিধনের প্রথম ও প্রধান শর্ত মশার বিস্তার ঠেকানো। সেটি করতে হলে মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করতে হবে অথবা কোনো স্থান বা এলাকাকে মশার প্রজনন ক্ষেত্র হতে দেয়া যাবে না। এটি নিশ্চিত হতে পারে শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। কিন্তু সেদিকে কর্তৃপক্ষের যেমন কোনো নজর নেই তেমনি নগরবাসীও সচেতন নয়। তারা ফাঁকা জায়গা পেলেই সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। একজনকে দেখে আরো ১০জন একই কাজ করছে। কেউ কাউকে নিবৃত বা সচেতন করছে না। বরং একে অন্যকে অনুসরণ করে মশার বংশ বিস্তারে সহায়তা করছে।

বেশি বিপাকে পড়েছেন নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবসম্পৃক্ত ওয়ার্ডগুলোতে মশার ভয়াবহ উপদ্রব বাড়ছে এবং জনদুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে; কিন্তু মশানিধনে দুই সিটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আর এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন এসব এলাকার নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক অন্যান্য অনেক সেবাই না থাকায় এখনো অধিকাংশ ওয়ার্ডে গ্রামের আদলেই বসবাস করছেন এখানকার বাসিন্দা।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সূত্রে জানা যায়, নগরীতে প্রতি বছর মশকনিধনে ওষুধ বরাদ্দ দিলেও নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পায়নি। তাছাড়া প্রয়োজনীয় লোকবলেরও রয়েছে সংকট। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক অনেক স্থানেই এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলছেন অধিবাসীরা। সুযোগ পেয়ে এলাকার ডোবা-নালা ও খাল-বিলে নির্বিচারে ময়লা ফেলছেন সবাই। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশার ভয়াবহ উপদ্রব।

সামনে আসছে বর্ষাকাল। যত্রতত্র জমে থাকবে পানি। মশার বংশবৃদ্ধিতে তা আরো সহায়ক হয়ে উঠবে। এখনই কেন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। কর্তৃপক্ষ আগের মতোই একই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু তা কতটা কার্যকর করা হয় এ বিষয়ে প্রায় প্রত্যেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। মশানিধনে আর প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন চাই।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ