ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়

প্রকাশনার সময়: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৩২

ভাঙা-গড়ার চিরায়ত নিয়ম মেনেই জীবন সুন্দর। বেদনা, একাকিত্ব, দুঃখ জীবনেরই অংশ। সুখের পর দুঃখ আবার দুঃখের পর সুখ— এ চক্রেই আমাদের জীবন আবদ্ধ। এ কথাগুলো কমবেশ আমরা সবাই জানি। তবু কেউ কেউ বেদনার সঙ্গে লড়তে ভুলে যাই, নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখার আগেই আত্মহনন করে বসি। আমাদের মাথায় থাকে না এ চলে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া। কত অজস্র স্পার্মের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে যে আমরা মাতৃগর্ভে এসেছি, সেই আমরাই পরিণত হয়ে আত্মহনন করছি বেদনার ছোবল থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে। প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারি বলেই আমরা মানুষ। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। ভাঙা-গড়ার প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করে মানবজন্মকে বৃথা করা আমাদের উচিত নয়। কিছু সময় জীবনে আসবেই যেগুলো পার করা সত্যিই কষ্টকর। কেউ পাশে না থাকা বা গভীর একাকিত্ব, কিংবা বিচ্ছেদ অথবা ব্যর্থতার বৃত্তে আবর্তিত হওয়া— এগুলো সবার জীবনেই আসে এবং আসবেই। এটাই সত্য। নিজের জীবনকে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে। জীবনের সঙ্গে যারা জড়িয়ে আছে তাদের রেখে আত্মহনন করার অধিকার কি আমাদের আছে? না, নেই। একটি বিখ্যাত পিক্ত রয়েছে, ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়।’ আমরা চলে গেলে আমাদের চারপাশের মানুষগুলো, আমাদের পরিবার, আমাদের প্রিয়জনরা কেমন থাকবে আত্মহনন করার সিদ্ধান্ত মাথায় আনার আগে এটা সবার ভাবা উচিত। জীবনের গূঢ় সত্যটা ভাবলে দেখা যায়, বেদনাও সুন্দর। বেদনাকেও উপভোগ করা যায়। প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজেকে সময় দেয়া, নিজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা। তারপর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। প্রতিটি মানুষের উচিত ভালো ও ইতিবাচক চিন্তার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখাও সুখী জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবসর সময়টাকে একাকিত্ব হিসেবে না দেখে নিজের প্রিয় কোনো কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। এগুলো হতে পারে আড্ডা, বইপড়া, টিভি দেখা, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা। যারা একাকিত্ব অনুভব করেন তারা সম্পর্ক গড়ায় মনোযোগ দিন। ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে আসুন, শখের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, ধর্মকর্ম পালনে মনোযোগ দিন। দেখবেন জীবন অনেক উপভোগ্য। যারা ব্যর্থতার চক্রাকারে আবদ্ধ তারা লড়াই করুন। পরিশ্রম কখনো কাউকে নিরাশ করে না। নিজেকে ব্যর্থ মনে করে পৃথিবীকে যত কুৎসিত মনে করছেন, একবার শুধু সফল হোন, ততগুণ বেশি সুন্দর দেখবেন পৃথিবীকে। কিছু মানুষ রয়েছেন যারা আত্মহনন করেন হীনম্মন্যতায়, মর্যাদাহানিতে, অপরাধের শিকার হয়ে। তাদের উদ্দেশে বলব ফিরে আসতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই নতুন জীবনে ফেরা সম্ভব। আমাদের সবার জীবনের মূলমন্ত্র একই, তা হলো লড়াই বা যুদ্ধ। আত্মহত্যা রোধে সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার সবার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য বহাল রাখার দায়িত্ব সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারেরই। কেউ ব্যর্থ হলে, অন্যায় করলে কিংবা কারো সঙ্গে অন্যায় হলে তাকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। তাকে ধিক্কার দেয়া, মানসিকভাবে অপদস্ত করা বা সামাজিকভাবে হেয় করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। কাউকে মানসিকভাবে সতেজ রাখার উপায় হলো তাকে সঙ্গ দেয়া। বর্তমানের অধিকাংশ আত্মহত্যাই হলো নিঃসঙ্গতাজনিত। নিজের বন্ধু, পরিবারের কেউ বা সমাজের কেউ নিঃসঙ্গতায় ভুগলে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে।

আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করতে গণমাধ্যমগুলোরও সচেতনতার প্রয়োজন। অতিরঞ্জিত করে আত্মহত্যার সংবাদগুলো উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আত্মহত্যাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস, মুক্তচিন্তার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আত্মহত্যার বিষয়টি এমন যে, একক ব্যক্তি দ্বারা এর সমাধান সম্ভব নয়। চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, এলাকার মাতব্বর, মসজিদের ইমাম, সাংবাদিক, পুলিশ প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো ভূমিকা আছে। সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে আত্মহত্যার প্রবণতাকে দমন করা সম্ভব।

আত্মহত্যা সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই জোরালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। না হয় জাতির জন্য সামনে অপেক্ষা করছে অশনি সংকেত!

লেখক: শিক্ষার্থী, লোক-প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ