ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্ষমতার রাজনীতি মুক্ত হোক ছাত্ররাজনীতি

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৫১ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২, ১৫:০১

শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির ১৫১তম বলি বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ। এর আগে আরো ১৫০টি হত্যাকাণ্ডের দেশ, যার কোনটির-ই বিচার হয়নি। আবার কয়েকটির রায় হলেও সাজা এখনো অধরা। এমনকি, অধিকাংশের তদন্তই শেষ হয়নি। কবে হবে, সেটাও ধোঁয়াশা। তবে জানা কথা, অন্যায়ের সাজা দিতে শেখ হাসিনার সরকার কাউকে ছাড় দেবে না, দেয়নিও। আবরার হত্যায় ২৫ আসামির ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন এটারই প্রমাণ বাহক। আপিলেও রায়ের ‘পরিবর্তন’ হবে না বলেও বিশ্বাস।

এই রায় ‘উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রনেতাদের’ (!) সতর্ক বার্তা। ছাত্রলীগকে যারা ‘পৈত্রিক সম্পত্তি’ মনে করেন, তাদের জন্যও বার্তা, ‘এটা শেখ মুজিবের সংগঠন, অপরাধীর প্রশ্রয় এই সংগঠন দেয় না। যে দলের-ই হোন, অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।’

এই রায়ে আমরা জাতি হিসেবে সন্তুষ্ট। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুয়েটে ঘটিত আরও অন্তত দুটি হত্যার বিচার চাই। একটি বুয়েটশিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার সনি এবং দ্বিতীয়টি একই প্রতিষ্ঠানের আরিফ রায়হান দ্বীপ হত্যা। আশা করি, এই দুটির বিচারও পাবে সন্তানহীন পরিবার, এটা তাদের অধিকার।

বুয়েট সূত্রে খবর, আবরারের পরিবারকে কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা দিচ্ছে, যা চলবে ১২ বছর। এই মামলা লড়তে প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা, যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই ক্ষেত্রে বুয়েট প্রশাসন অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছে, এটাই হওয়া উচিত।

এখন প্রশ্ন, সাবিকুন নাহার সনি এবং দ্বীপ হত্যার ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসন নীরব কেন। সবগুলোই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড! তাদের পরিবার সমান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন। প্রশাসনের কেন এমন দ্বিমুখী আচরণ। এতগুলো কেন’র উত্তর কে দেবে?

শিক্ষার্থীদের মানবিক গঠনে পরিপক্ব করতেই শিক্ষাঙ্গনে পাঠানো হয়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আবরার হত্যাকাণ্ড চলে ৬ ঘণ্টা ধরে। এই সময়টাতে বুয়েট প্রশাসন, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর কোথায় ছিল? দায়িত্বে অবহেলার বিচার কে করবে, এটাও কি কম অপরাধ? আমরা এই বিচারও চাই।

শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতার বিচার না হওয়ার ধারা প্রবর্তন করার জন্য জিয়াউর রহমানে নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। তিনিই প্রথম মহসিন হলের সেভেন মার্ডারের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি শফিউল আলম প্রধানকে মুক্তি দিয়ে তাকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ছাত্ররাজনীতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্যও সাবেক ডাকসু ভিপি আমানুল্লাহ আমানের নামও ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। নব্বই দশকে যখন তিনি ডাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হন, তখন তাকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্লোগান দেয়া হতো, ‘খালেদা জিয়ার কামান, আমানুল্লাহ আমান’। এর আগে আমাদের ছাত্ররাজনীতির ছিলো গৌরবময় ইতিহাস।

তাই এই দশকে একটাই চাওয়া, ক্ষমতার রাজনীতি মুক্ত হোক ছাত্ররাজনীতি। ছাত্ররাজনীতি থাকুক কেবল শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণের তরে। থাকুক অসহায়, নিপীড়িত মানুষের পাশে, থাকুক সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী স্ফুলিঙ্গ’ হয়ে। কোন দল কিংবা সংগঠনের ক্ষমতা দখলের কামান হিসেবে যেন আর কোন ছাত্রনেতাকে বলি হতে না হয়; এটাই হোক এই প্রজন্মের প্রত্যাশা।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও বিতার্কিক।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ