ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শ্রমিকে শ্রমিকে বৈষম্য দূর হোক

প্রকাশনার সময়: ০১ মে ২০২৪, ১৮:০৪ | আপডেট: ০১ মে ২০২৪, ১৮:১৪

দিবস মূলত শ্রমিকদের দিবস। কারণ এ দিবসটিতেই বিশ্বের প্রায় সব দেশে একসঙ্গে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলে শ্রমজীবী মানুষ এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু এত দীর্ঘ বছরের আন্দোলন, সংগ্রামের পরও দেশে দেশে শ্রমজীবীদের মধ্যে আয় বৈষম্য বেড়েই যাচ্ছে। অনেকেই বলতে চান, মে দিবস পালন একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এ দিবসটিকে ঘিরে যত কর্মসূচিই পালন করা হোক না কেন, শ্রমিকদের ভাগ্য বদলাচ্ছে না। যারা শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে তাদের কথাই শেষ কথা। এ ছাড়া উপায়ও নেই। কারণ বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্যের যে লাগামহীন চড়া মূল্য তাতে জীবন বাঁচাতে হলে কিছু না কিছু আয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার প্রস্তাব মতো কাজে যোগ না দিলে বেকারত্ব বয়ে বেড়াতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় সেই দুঃসাহস দেখানোটা বোকামি হতে পারে বলে ভাবে সবাই।

গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি। অথচ এ মাধ্যমটিতে যারা সময়, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করেন তাদের অধিকাংশই নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের মাসের পর মাস বেতন-বোনাস বকেয়া রাখা হচ্ছে। বিশেষ দিবসগুলোতেও ছুটি মেলে না। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশের ক্ষেত্রে এ চিত্র দেখা যায়। একজন প্রতিবেদকের একটি প্রতিবেদনে অনেক প্রভাবশালীর বুকে কাঁপন উঠে যায়, সেই প্রতিবেদক সমাজ যখন নিজেই বঞ্চনার শিকার হন তখন আর এ কথা বলার জায়গা থাকে না। তবে যারা শ্রমের মূল্য দেন, শ্রমিকের মূল্য দেন তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক সাধুবাদ সব সময়।

শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন আজ। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ওই সময় তাদের নির্দিষ্ট কোনো কর্মঘণ্টা ছিল না। নামমাত্র মজুরিতে তারা মালিকদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হতেন। হে মার্কেটে আহূত ধর্মঘটী শ্রমিক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ৬ শ্রমিক। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক ফেটে পড়েছিলেন বিক্ষোভে। সেদিনও পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছিল। এভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিক শ্রেণি কায়েম করেছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। এরপর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টার সঙ্গে পরে বেতনবৈষম্য দূর করা, ন্যূনতম মজুরি, নিয়োগপত্র প্রদানের মতো বিষয়ও শ্রমিকদের জোরালো দাবিতে পরিণত হয়।

মে দিবসের পথ ধরেই শ্রমিকদের নানা অধিকার অর্জিত হয়েছে। সেই সঙ্গে নিজেদের ও তাদের শ্রমের মর্যাদা পেয়েছে গুরুত্ব। বিশ্বব্যাপী ট্রেড ইউনিয়নগুলো শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নত দেশে এখন শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি কাজের পরিবেশও হয়েছে উন্নত। তবে অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেক বেসরকারি শিল্প-কারখানায় আইএলও নির্ধারিত শ্রমঘণ্টাও মানা হয় না। দেশে শ্রমিক শ্রেণি শুধু ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত নয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণও বটে। আগুনে পুড়ে ও ভবন ধসে প্রায়ই মরতে হয় তাদের।

শ্রমিকদের ঘাম ঝরা পরিশ্রমে গড়ে ওঠে নগর, শহর, সভ্যতা। বিশ্বজুড়ে যত আলোকোজ্জ্বল আয়োজনের পেছনে শতভাগ বিনিয়োগ শ্রমিকের। তাদের জীবনের সব বৈষম্যের অবসান হোক আজ।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ