ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ একটি এলাকা। যে কারণে নিয়মিত বিরতিতে ভূমিকম্পের ছোট ছোট আঘাত টের পাওয়া যায়। তবে শঙ্কা রয়েছে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার। সেরকম কিছু হলে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে বিষয়টি মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন। কারণ ভূমিকম্প সম্পর্কে আগাম কোনো সতর্কবার্তা দেয়া সম্ভব নয়। আবার ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কাজ এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে।
মূলত বার্মিজ এবং ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ। এ সংযোগ স্থলেই রয়েছে অধিকাংশ পার্বত্য এলাকাসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল। এই দুই প্লেটের মধ্যে পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে বার্মিজ প্লেট আর উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেট। প্লেটের সংযোগস্থলে জমা রয়েছে প্রচুর শক্তি। দুই প্লেটের পরস্পরের গতির কারণে এ শক্তি যখনই বেরিয়ে আসার পথ খোঁজে তখনই কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ।
চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ছোট থেকে মাঝারি ভূমিকম্পে বারবার কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ- যার প্রতিটির কেন্দ্রস্থল বা উৎপত্তিস্থল রয়েছে দেশটার মধ্যে। গতকাল শনিবারও ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। কেঁপে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ। যারা এর ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন তাদের প্রায় সবাই বলছেন, অতীতের তুলনায় এ ঝাঁকুনি ছিল ভয়ের এবং প্রবল। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে অনুভূত হয় এ ভূকম্পন। এর উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের আসামে ১৮৯৭ সালে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই সময় ঢাকায় মাত্র ১০০টি পাকা দালান ছিল, অধিবাসী ছিল ৯০ হাজার। ওই ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকম্পের মূল উৎস সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যে পার্বত্য এলাকা রয়েছে সেটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, একইভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতের মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম রাজ্য আর মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকা।
বাংলাদেশে যেভাবে ভূমিকম্প হচ্ছে তা কিন্তু মৃদু থেকে মাঝারি। রয়েছে বড় ভূমিকম্পের প্রবণতা, সেটা যে কোনো সময়ই হতে পারে। প্রকৃতিকে এখনো মানুষ পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি। তাই বড় ভূমিকম্প কখন হবে তার নির্দিষ্ট করে আগে থেকে বলা যায় না। তবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি হিডেন বা লুকায়িত ফল্ট রয়েছে, যা বাংলাদেশে তৈরি করতে পারে রিখটার স্কেলের ৯ মাত্রার ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ৮০০ থেকে ১০০০ বছরের মধ্যে এখানে জমে থাকা শক্তি বের হয়নি। সাধারণত এ ধরনের প্লেটের সংযোগস্থলের ভূমিকম্পের বেশিরভাগই মাত্রা হয় ৭ দশমিক ৫ এর উপরে। পরিণাম হয় ধ্বংসাত্মক। ভূমিকম্পে হতাহতের ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। বাংলাদেশের ভিতরে ১৩টি ভূগর্ভস্থ চ্যুতির প্রায় সব কটি ঢাকা থেকে বেশ দূরে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটে মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্প হলে ঢাকায় অনেক ভবন ভেঙে পড়তে পারে। ঢাকার ভবনগুলোর বেশির ভাগই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এবং ভূমিরূপ মেনে নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে ভূমিকম্প বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই টিকে আছে। সে রকম কোনো বিপর্যয় ঘটলে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবই সবাইকে নতুন করে টিকে থাকার শক্তি জোগাবে বলে বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার মনোভাব রাখতে হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ