নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সমমনা অন্যান্য দল রাজপথে আন্দোলনে আছে। তারা একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ উৎকণ্ঠায় রয়েছে। তাদের দুশ্চিন্তার কারণ তারা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিচ্ছে। তবে প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছে। ইতোমধ্যে সড়কে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে। এতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য কতটা হাসিল হবে জানা নেই। তবে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আওয়ামী লীগও নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে কোনো আপসে যাচ্ছে না, যাবে না। কারণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্টটা আওয়ামী লীগেরই ছিল এবং ২০০১-এ আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি সেটাকে বিতর্কিত করেছে। তাই সরকারিদল তাদের আর বিশ্বাস করতে পারছে না। এ ছাড়া একসময় বিএনপিই এ ধরনের সরকারের বিরোধিতা করে নিজেদের অধীনেই নির্বাচন করেছিল।
অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাদের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবে না জানিয়ে দিয়েছে। এরকম পরিবেশে সংলাপ বা সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব তা নিয়েও সব মহলে উদ্বেগ রয়েছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন বা তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। এ হিসাবে ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে।
সেই লক্ষ্যে ভোটের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ইসি। অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচনি সরঞ্জামের বেশিরভাগ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভোটের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর ১৪ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি। আপাতত ৬ জানুয়ারি ঘিরেই ছক কষে এগোচ্ছে কমিশন।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য নির্বাচন মানে উৎসব। চায়ের আড্ডায় তুমুল বিতর্ক। দিনশেষে পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। কিন্তু গত কয়েক বছরে নির্বাচন এলেই যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তাতে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ বিনষ্ট হতে বাধ্য। রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয় তবে আগে জনস্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। জনগণ কী চায় তা উপলব্ধি করতে হবে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ভোটার নানা ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
তাই বলে সরকার হটাতে বা নির্বাচনকালীন পছন্দের সরকারের দাবিতে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি এখন আর কেউ পছন্দ করে না এটিও মনে রাখতে হবে। কারণ এতে সাধারণের প্রাণ যায়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়। খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের পেটে লাথি পড়ে। জিনিসপত্রের আরও দাম বাড়ে। কারণ এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী রয়েছে যারা সবসময়ই সুযোগের সন্ধানে থাকে। হরতাল অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাসের অজুহাতে তারা পণ্যের দাম আরও বাড়াতে পারে।
যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সব রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনি পরিবেশ সুন্দর হোক যাতে ভোটাররা নিশ্চিন্তে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি।
নয়া শতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ