রাজনীতি মানেই ক্ষমতার হাতবদল। একদল রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকবে, অন্যান্যরা সেই সরকারের ভুল-ত্রুটি জাতির সামনে তুলে ধরে সরকারকে বাধ্য করবে সঠিক পন্থায় জনস্বার্থে কাজ করতে। সরকার বেপরোয়া হলে, কারও কোনো যৌক্তিক দাবির ধার না ধারলে সেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করার নৈতিক অধিকার রয়েছে অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলের। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে প্রতিবাদ জানানো হয় তাতে না সরকার নড়েচড়ে, না বিরোধীদলের কোনো ফায়দা হয়। কাজের অকাজ একটাই হয় তা হলো, গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের কপালে দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৮ অক্টোবরের পর থেকে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সড়কে লাশ পড়ছে, বাসে-গাড়িতে আগুন ধরছে, কর্মমুখী মানুষ সড়কে গাড়ি পাচ্ছে না, খেটে খাওয়া মানুষের কাজ জুটছে না। অথচ যারা কর্মসূচি দিচ্ছেন তারা বেশ আছেন। তাদের না পাওয়া যাচ্ছে সড়কে, তারা না আছেন কর্মসূচি পালনে। তাহলে এ কর্মসূচি কেন?
আমরা বলছি না সরকারের কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি নেই। সেই বিচ্যুতি তুলে ধরে জনসমর্থন আদায় করে দেশ শাসনের ভার আদায় করে নেয়া একটি রাজনৈতিক দলের সাফল্য। কিন্তু জ্বালাও-পোড়াও কেন? বিএনপি এবং তাদের জোটবদ্ধ দলগুলো সরকারের পদত্যাগ চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব ভার তুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। না হলে তারা নির্বাচনে যাবেন না। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, এটা কোনো প্রতিবাদের ভাষা নয়। যদি জনকল্যাণের জন্যই রাজনীতি হয়, যদি নির্বাচন এবং গণতন্ত্রে কিশ্বাস থাকে, সর্বোপরি জনগণের ওপর আস্থা থাকে তাহলে তাদের নির্বাচনে আসতে হবে। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আজ তারা রাজপথ জ্বালিয়ে দিচ্ছে, জনজীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে- সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিটি তারাই ধ্বংস করে দিয়েছিল। সুতরাং এর দায়ভার তাদেরই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
একদিনের হরতাল, অবরোধ মানে ফুটপাতে যারা পসার নিয়ে বসেন তাদের আয় বন্ধ, সিগন্যালের হকারের বিক্রি বন্ধ, দিনমজুরি যারা করেন তাদের কাজ বন্ধ, রিকশাওয়ালা যাত্রী পান না, সিএনজিওয়ালা যাত্রী তুলতে ভয় পান। গতকাল বিএনপির ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দফা শেষ হলো। আজ বিরতি নিয়ে আগামীকাল থেকে আবার দুদিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য আরও দুদিনের দুর্দশা যোগ হলো। কথায় আছে- রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে, প্রাণ যায় উলু খাগড়ার। একদল ক্ষমতায় যাবে, অন্যান্যরা বিরোধী দলে অথবা আবার রাজপথে অবস্থান নেবে। কিন্তু এ দুই বা একাধিক দলের নানা কর্মসূচিতে পেটে লাথি পড়ছে গরিবের। সেদিকে কারও খেয়াল নেই।
লক্ষণীয় যে, এবারের হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে সড়ক প্রায় ফাঁকাই ছিল বলা যায়। বাস গাড়ি যা চলেছে তা-ও সীমিত। দিনে যাও-বা চলেছে, সন্ধ্যার পর বা একটু রাত বাড়লেই তা কমে গেছে। ভুতুড়ে ভাব চলে এসেছে এ ব্যস্ত নগরে। এর অর্থ এই নয় যে জনগণ বিএনপি এবং তাদের সমমনাদের কর্মসূচিতে সমর্থন জানাচ্ছে। আবার এও নয় যে, সরকার সমর্থকরা পুরো পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মূলত প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। কারণ সাধারণের ক্ষয়ক্ষতির দায় কেউই নিতে চায় না।
ন্যায্য যে কোনো দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করবে- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, সেসব কর্মসূচি যেন জনদুর্ভোগ না বাড়ায়। খেটে খাওয়া মানুষের মুখের হাসি কেড়ে না নেয়।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ