বছরের প্রথমদিন সারা দেশের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়ার মতো বিরল এবং আনন্দময় উদ্যোগ বর্তমান সরকারেরই দূরদর্শী পদক্ষেপ। এটা তো কারও কল্পনাতেই ছিল না যে, বিনামূল্যে কোটি কোটি টাকার বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, তাও আবার বছরের প্রথমদিন। কারণ নতুন বই মানে শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যরকম এক আবেগ। নতুন শ্রেণি, নতুন বই, নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু করা- এ অনুভুতির তুলনা হয় না। এমন একটা সময় তো ছিল যখন বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়া মফস্বল বা আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন বছরের বই পেতে প্রথস সাময়িক পরীক্ষা চলে আসত। কোথাও কোথাও আরও দেরিতে পৌঁছাত বই।
অনেকে আগের বছরে পাস করে যাওয়া কাছের মানুষদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যেত। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। সরকার একযোগে সারা দেশে বছরের প্রথমদিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। কিন্তু গত বছর বই নিয়ে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে তাতে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর করার যেন কিছুই ছিল না। সরকারের এত মহৎ একটি কর্মকাণ্ডকে ধুলায় মিশিয়ে দিতেই যেন সংশ্লিষ্টরা উঠেপড়ে লেগেছিল। কাগজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। গত বছরও তা ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য। অনেক গল্প, কবিতার সঠিক উপস্থাপন হয়নি, সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন করা হয়েছে অত্যন্ত নগ্নভাবে- এসব কথাও উঠে এসেছে সে সময়কার আলোচনা-সমালোচনায়।
সবকিছু ছাপিয়ে বিষয়টি সবার জন্য ছিল বিব্রতকর। ৫ নভেম্বর নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গত বছর। কাগজ আমদানি ও মান নিয়েও ক্ষোভ ছিল প্রেস মালিক-শিক্ষার্থীদের। বই বিতরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি। জানা যায়, সামনে নির্বাচন। তাই এর আগেই জেলা-উপজেলায় বই পৌঁছে দেয়ার জন্য রাত-দিন কাজ চলছে প্রেসগুলোতে। মুদ্রণ শেষ হলেই বাঁধাইয়ের কাজে লেগে পড়ছেন কর্মীরা।
এনসিটিবির তথ্যমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের ৯ কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানো প্রায় শেষ। সেগুলো উপজেলায় পাঠানোও হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ হবে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। প্রেসে গেলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ এখনো বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পার্সেজ কমিটির মিটিং হলে পাণ্ডুলিপি দ্রুত প্রেসে পৌঁছে যাবে। বই পেতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে। এ বছর খুব গুরুত্বের সঙ্গে বইয়ের তদারকি করা হচ্ছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার কম ছাপানো হচ্ছে তিন কোটি বই।
বই ছাপানো হোক সঠিক সময়, তা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাক— এটি সবারই প্রত্যাশা। তবে শুধু বই হলেই তো চলবে না। বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ প্রতিটি শব্দ, তথ্য হতে হবে সত্যভাষণ। কোনো জাতি গোষ্ঠীকে হেয় করা যাবে না। এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না— যা বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন না করে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ