ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এসব অরাজকতার শেষ হোক

প্রকাশনার সময়: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৭

অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী মারা যাওয়ার পরও আইসিইউতে রেখে বাড়তি বিল করার অভিযোগ অনেক পুরোনো। এসব হাসপাতাল প্রথম সারির। রোগীর স্বজনরা এর প্রতিবাদ করলেও বিপদ, না করলেও বিপদ। প্রতিবাদ করলে যদি রোগী তখনো বেঁচে থাকেন তবে তার সঠিক চিকিৎসা হবে না আর মরে গিয়ে থাকলে অভিযোগ তুললে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ অন্যরা কর্মবিরতিতে যাবেন। দুর্ভোগে পড়বেন হাসপাতালে আসা অন্য রোগীরা।

ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনরা এসব জেনেবুঝেও মেনে নেন বা মেনে নিতে বাধ্য হন। আসলে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষমতাধরদের কাছে জিম্মি। আইসিইউ একটি স্পর্শকাতর জায়গা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে একজন রোগীকে আইসিইউ বা ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের’ আওতায় নেয়া হয়। যখন একজন স্বজন জীবন মৃত্যু সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছান তখন তার স্বজন যারা হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন-সেই মুহূর্তে চিকিৎসকের মুখের কথাই তাদের কাছে বেদবাক্য। চিকিৎসক যা বলবেন তা-ই তারা অন্ধের মতো অনুসরণ করবেন।

উদ্দেশ্য একটাই স্বজনকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়া। কিন্তু আইসিইউ’র মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও যে ব্যবসা হতে পারে তা কারো মাথায় না আসতেই পারে। কিন্তু বর্তমানে তা দেদার হচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই রোগীকে আইসিইউতে পাঠানো হচ্ছে।

১৬ অক্টোবর নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, যে কোনো মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় (আইসিইউ) প্রয়োজন হয় শেষ ভরসাস্থল হিসেবে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স-টেকনিশিয়ান, ল্যাবরেটরি সুযোগ-সুবিধার অভাবে সুচিকিৎসার এ শেষ জায়গাটি অনেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

বিশেষায়িত সেবার নামে রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রায় শতাধিক আইসিইউতে নেই ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুমূর্ষু রোগীর জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত আইসিইউ খোলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় না। এছাড়া কোনো ধরনের রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হবে— এ সংক্রান্ত কোনো আইন, নীতিমালা কিংবা গাইডলাইনও নেই। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নিয়ে আইসিইউ খুলে বসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ থাকলেও মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যার তুলনায় তা খুবই কম। ফলে অধিকাংশ রোগীকে নিরুপায় হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। আর এ সুযোগে মোটা অঙ্কের কমিশন প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তারা বাণিজ্যে মেতেছেন। এক শ্রেণির অসৎ ডাক্তার, নার্স ও দালালচক্রের সহায়তায় রোগীর অভিভাবকদের মানসিক দুর্বলতাকে পুঁজি করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বহু সংখ্যক রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হচ্ছে।

এর অর্থ হচ্ছে চিকিৎসাসেবা এখন ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার সবচেয়ে লাভজনক শাখা হলো ‘আইসিইউ’। হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে বেড খালি থাকতে পারে কিন্তু আইসিইউর বেড কখনো ফাঁকা থাকে না। বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা বড় বড় হাসপাতালে আইসিইউতে গড়ে প্রতিদিনের খরচ ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। মাঝারি মানের হাসপাতালে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা খরচ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এ বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করেও শেষ পর্যন্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। ফলে ভিটেমাটি জমিজমা বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গোটা পরিবার।

প্রয়োজন ছাড়াই রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে আইসিইউ খুলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে না এটি একটি হতবাক করার মতো বিষয়। আমরা চাই, মানুষের জীবন-মরণ মুহূর্তকে ব্যবসায়িক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করার মতো অরাজকতার শেষ হোক-এটাই প্রত্যশা।

নয়া শতাব্দী/এসআর/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ