ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশনার সময়: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫৬

সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দেশ অনেক এগিয়েছে এ কথা অস্বীকার করার জো নেই। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়িখ্যাত বাংলাদেশ বিশ্বের চোখে আজ বিস্ময়। উন্নয়নের রোল মডেল বলেও খ্যাতি পেয়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এ অক্টোবরেই বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। তখন আরও পাল্টে যাবে দেশটির চেহারা। বিশ্ব বিস্মিত হয়ে দেখবে তা। তবে সরকারের সব অর্জন ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে।

সরকারের নির্দেশও উপেক্ষা করে তারা স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ রেখেই যাচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির নেপথ্যে দায়ী সিন্ডিকেট। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। কারণ এটা করলে তারা যদি সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যবসা বন্ধ রাখে তাহলে আরও বিপদে পড়তে হবে। একটি সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিস্মিত হন। কারণ একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। এতে সংঘবদ্ধ চক্র আরও প্রশ্রয় পায়। হয়েছেও তাই। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছেমত নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার নির্মম শিকার হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। এই ঢাকা শহরে প্রচুর মানুষ রয়েছেন যারা সারাদিন পরিশ্রম করে রাস্তার পাশের সস্তার হোটেলে খাবার খান। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব হোটেলেও সস্তায় খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের শিঙাড়া, পুরি এসব খেয়ে চলতে হচ্ছে। একদিকে আয় নেই, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারছেন না- এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কথা কি কেউ ভাবছে? দেশের মানুষ না খেয়ে নেই- এই আত্মতৃপ্তিতে যারা ভুগছেন তারা ভুল করছেন। কারণ এ ধরনের ধ্যান ধারণা নিরন্ন, অভুক্ত মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে মশকরা করার শামিল। কারণ মানুষ খাচ্ছে, কিন্তু কী খাচ্ছে?

কোনোরকম উদরপূর্তিই কী জীবনের শেষ কথা? একজন মানুষকে সুস্থ, সবল থাকতে হলে খাদ্যে যে সামান্য পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকা দরকার তা তারা খেতে পারছেন না। মেধা বিকাশের জন্য শরীরকে যে সুষম খাদ্য দেয়া দরকার তা যদি দেয়া না যায়, তবে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছ থেকে আমরা কী সেবা আশা করতে পারি। আমরা আমাদের সম্পাদকীয় পরিমণ্ডলে বারবার বলার চেষ্টা করছি, খাদ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিন। কারণ একজন মানুষ বা একটি পরিবার শুধু খেয়ে পড়েই বেঁচে থাকে না। তাদের আরও নানাখাতে ব্যয় রয়েছে। বাসা ভাড়া, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অতি জরুরি চাহিদা মেটাতে হয়। এ ছাড়া আয়ের সবটুকু খরচ করে ফেললে বিপদকালীন প্রয়োজনে তারা কার দ্বারস্থ হবে? সবারই তো একই অবস্থা! আতঙ্কের কথা হলো, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঞ্চয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। বরং কোনো ক্ষেত্রে তারা আগের সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাচ্ছেন।

কোভিড-১৯ বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই যদি পণ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের একমাত্র কারণ হতো, তাহলে এদেশের জনগণ তা মেনে নিত। কিন্তু এ দুটি কারণের অজুহাতে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চক্র যে কারসাজি করে যাচ্ছে তা মেনে নেয়া যায় না। ডিম, আলু এবং পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পরও তা কোথাও মানা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশই যদি কেউ না মানে তাদের শাস্তি না হলে এই অরাজকতার শেষ হবে কীভাবে?

সরকারকে সমাজের প্রকৃত চিত্র প্রত্যক্ষ করতে হবে। অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর না হলে এর খেসারত দিতে হবে এই দেশ ও জাতিকে। তা আমাদের কারও কাম্য নয়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ