বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতেই আশঙ্কা করেছিল বাংলাদেশে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে তা সত্য হতে শুরু করেছে। সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারছে না। বরং দিন দিন আতঙ্ক এবং রোগী বাড়ছে। শুরুতে রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকলেও এখন তা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর কোনো হাসপাতালে সিট খালি নেই। যে কারণে সংশ্লিষ্ট মহল রাজধানীর বাইরে রোগী যাতে ঢাকায় পাঠানো না হয় সে নির্দেশনা জারি করেছে।
সুতরাং পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করা কঠিন নয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরও। এসব রোগীর চিকিৎসায় সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইনের। কিন্তু সেখানেও স্বস্তি নেই। গত তিন মাসে এর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে সংঘবদ্ধ অসৎ চক্র বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি করে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা- এমনই অভিযোগ রয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিনমাসে স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। বাজারে ৮৮ টাকার স্যালাইনের দাম নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত। রোগীদের অভিযোগ, এরপরেও কোনো কোনো ফার্মেসিতে স্যালাইন মিলছে না। ফলে ফার্মেসি মালিকদের কাছে একরকম ‘জিম্মি’ হয়ে পড়েছেন ডেঙ্গু রোগীর স্বজনরা। অন্যদিকে স্যালাইনের ওই সিন্ডিকেট অতিরিক্ত দামে স্যালাইন বিক্রি করে গত তিন মাসে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
বিক্রেতারাও স্বীকার করছেন স্যালাইনের দাম তারা বেশি রাখছেন। কারণ সাপ্লাই না থাকায় তারা বিভিন্নভাবে তা জোগাড় করে দেন। যে কারণে বাড়তি দাম রাখতেই হয়। রোগীর স্বজনরা যত দামই হোক স্যালাইন কিনবেন। কারণ স্যালাইন ছাড়া ডেঙ্গু বা ভাইরাস আক্রান্ত জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব নয়। যে কারণে অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে স্যালাইন সংকট তৈরি করেছে এবং মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের পকেট ভারি করছে। করোনার মতো মহামারির সময়ও একই চিত্র দেখেছি। করোনা চিকিৎসায় যেসব পণ্য জরুরি প্রয়োজনের তালিকায় ছিল সেগুলোর সংকট এবং দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করতেও আমরা দেখেছি। যখন পুরো দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী মানুষের জীবন সংকটকে পুঁজি করে ব্যবসায় নেমেছে। কেউ ভেজাল সেনিটাইজার বাজারে ছেড়েছে, কেউ নকল মাস্ক, মানহীন পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) বাজারে ছেড়ে ব্যবসা করেছে। মানুষের বিপদ, ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা, ধর্মীয় বা মানবতাবোধ এক্ষেত্রে কোনো কাজ করেনি।
অভিযোগ উঠেছে, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর গত তিনমাস ধরে সব ধরনের স্যালাইন সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিজেদের মতো করে দাম নিচ্ছে ফার্মেসিগুলো। কিন্তু দায়িত্বশীল মহলের অভিযোগ, সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধিসহ স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। স্যালাইনের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের এক টাকাও বেশি বিক্রি করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলছেন তারা।
অন্যদিকে সরকার ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ২০ লাখ স্যালাইন কিনতে যাচ্ছে। এতে অসৎ ব্যবসায়ীরা তাদের অরাজকতা বন্ধ করবে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট মহলের এ ধরনের অরাজকতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের শনাক্ত করে আইনি শাস্তি দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ