ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
সাইবার নিরাপত্তা আইন

উদ্বেগ নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৫

কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় জনসাধারণের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য। কিন্তু আইনের কিছু ফাঁক-ফোকর গলে তা অনেকের ওপর ভুলভাবে বা অপব্যবহার করা হয়-এমন উদাহরণ কম নেই। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ ছিল খুব জোরালোভাবেই। এই আইনটির বেশি অপপ্রয়োগ হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর- এমন অভিযোগ বরাবরই ছিল। সাংবাদিক সমাজ বারবার এই আইনটির বিতর্কিত ধারার পরিবর্তন বা বাতিল চেয়ে আসছে।

অবশেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হলেও মৌলিক দুর্বলতা ও উদ্বেগের কারণগুলো নিরসন করা হয়নি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সেটি যদি আইনে প্রণীত হয়, তাহলে এটিও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ‘কালো আইন’ হিসেবে প্রণীত হবে। তখন এটিও মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। তাই অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়াটিতে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

৩০ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। ‘খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপন করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন)।

নতুন করে দুটি ধারাকে জামিনযোগ্য করে ২৮ আগস্ট ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৭ আগস্ট মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়ার সময়ে আইনের খসড়ায় অজামিনযোগ্য ধারা ছিল ছয়টি। এখন দুটি ধারা নতুন করে জামিনযোগ্য করায় অজামিনযোগ্য ধারা রয়েছে চারটি। যদিও সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অনেকের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত আইনে সাজা কমানো ও জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো ইতিবাচক হলেও বিভিন্ন অপরাধের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট না করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক বিষয়বস্তু প্রায় একইভাবে রেখে দেয়ার কারণে প্রস্তাবিত আইনেও মানুষকে হয়রানি করার সুযোগ থেকেই যাবে। অবশ্য আইনমন্ত্রী প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অংশীজনদের ডেকে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি প্রক্রিয়া ও বিষয়বস্তু উভয় বিবেচনায় বিতর্কিত। প্রক্রিয়াগত বিতর্কের কারণ হলো, এই সরকারের সময় একটি ইতিবাচক চর্চা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। শুধু মতামতের জন্য ১৪ দিন সময় দিয়ে খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে তারা ধরে নিতে চান সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার এখনও সুযোগ আছে এবং সরকার এটি নিশ্চিত করবে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ কমানো হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ানোও হয়েছে। তা সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মৌলিক দুর্বলতাগুলো এখানেও রয়ে গেছে। যেসব কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্বেগ ছিল, সেগুলোও রয়ে গেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতা বিশেষ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এ বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলোর চেতনা ও বিষয়বস্তু দুটিই সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াতেও আছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির তুলে ধরা বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে আমরা মনে করি। মৌলিক দুর্বলতা এবং উদ্বেগের কারণগুলো নিরসন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ উদাহরণযোগ্য একটি আইন হয়ে উঠুক এটাই প্রত্যাশা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ