ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
মাদক পাচারে অস্থায়ী ‘জেটি’

এসব কারসাজি বন্ধ করতে হবে

প্রকাশনার সময়: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৬ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৭

মাদক এক ক্ষতিকর পণ্য, যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে এর চেয়ে সর্বনাশা আর কিছু নেই- এখন আর এসব সস্তা কথায় কারও কিছু আসে যায় না। যারা মাদকের ব্যবসা করে তাদের কাছে মাদক বিক্রি করে বিপুল অর্থ সম্পদ বানানোই বড় কথা। দেশ জাতি গোল্লায় গেলেও এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। যে কারণে মাদক কারবারিরা নিত্য নতুন পথ ও কৌশল অবলম্বন করে। তাদের কূটকৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু যখন এধরনের অপরাধের সঙ্গে দায়িত্বশীল কারও সম্পৃক্ততার কথা শোনা যায় তখন সাধারণ মানুষেরও অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স অবস্থান রয়েছে। কঠোর অভিযানও চালানো হয়েছে এর আগে। কিন্তু তবুও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই যেন ভাঙা যাচ্ছে না ইয়াবা ও আইচ পাচারের বৃত্ত। অপরাধীদের নিত্য নতুন কৌশলের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ছেন। আবার এমন অভিযোগ রয়েছে অপরাধীদের কৌশল সম্পর্কে অবগত থাকলেও সবকিছু জেনে চুপ থাকছেন কিছু অসাধু সদস্য। আর এ কারণেই পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রায়ই ধরা পড়ছে মাদকের বড় বড় চালান।

ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারবারিরা নতুন পন্থা বের করে ফেলছে এবং তা কাজেও লাগাচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে নদীপথে টেকনাফ হয়ে মাদক ঢুকছে কক্সবাজারে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে মাছ ধরার ট্রলার। এরপর ওইসব মাদক কক্সবাজারের সড়ক পথ দিয়ে পটিয়া হয়ে যাচ্ছে বাঁশখালীতে। সেখান থেকে আবারও নৌপথে আনোয়ারা হয়ে যাচ্ছে কালুরঘাট ও মাঝির ঘাটে। এরপর ঢাকাসহ সারা দেশে এসব মাদক ছড়িয়ে দিতে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজ ও বালুবাহী বাল্কহেড। এজন্য কালুরঘাটের বালির তোলার মহালকে বানানো হয়েছে অস্থায়ী ‘জেটি’। যদিও কর্ণফুলীর নদীর ২১ ব্লকে বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এর মধ্যে রেলওয়ে থেকে ইজারা নেয়া জায়গায় মাদক খালাসের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা একটি জেটি। ওই জেটি ব্যবহার করে নৌ-পরিবহনে তোলা হচ্ছে মরণঘাতী মাদকদ্রব্য। দক্ষিণ চট্টগ্রামের হয়ে বালুবাহী বাল্কহেড করে সারা দেশে মাদকের চালান পৌঁছে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে নয়া শতাব্দীর অনুসন্ধানে। ইতোমধ্যে এসব তথ্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সব ধরনের ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার থেকে সড়কপথে বাঁশখালী ও পটিয়াতে আসছে মাদকের চালান। এরপর সেখান থেকে কালুরঘাটে অস্থায়ী জেটি ব্যবহার করে নদীপথে মাদকের চালান খালাস হচ্ছে চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট এলাকার দুটি জেটিতে। যদিও চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটে লাইটারেজের পণ্য খালাস ও যাত্রী পারাপারের জন্য বতর্মানে ১৭টি জেটি ও ঘাট রয়েছে। সূত্রমতে, টেফনাফকেন্দ্রিক ইয়াবা ও আইচ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশই মাছের ট্রলারের ব্যবসায়ী। তারাই মূলত নৌপথ দিয়ে মাদক পাচারের নিরাপদ জোন গড়ে তুলেছেন।

আমরা জানি, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীতে অনেক যোগ্য ও সৎ লোক রয়েছেন। তারা তৎপর হলে সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ হতে বাধ্য। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করার অভিযোগ ওঠে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অচিরেই মাদক কারবারিদের বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে মনে করি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ