ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
পাঁচ পণ্য ঘিরে সিন্ডিকেট

ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

প্রকাশনার সময়: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫২

২০০১-২০০৫ মেয়াদে চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারের আমলে এদেশের মানুষ সিন্ডিকেট শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়। তখন তৎকালীন বিরোধীদলের পক্ষ থেকে নির্বাচনি ইশতেহারে ওয়াদা করা হয়েছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে সিন্ডিকেটের কালো থাবা থেকে এদেশের জনগণকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবে। সময়ের সিঁড়ি গড়িয়ে অনেক পথ অতিক্রম করেছি ইতোমধ্যে। কিন্তু সিন্ডিকেটের ভুত এদেশের জনগণের ঘাড় থেকে নামেনি। বরং আরও জোরালোভাবে ঘাড়ে চেপে বসেছে-এমন অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।

সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের নাগাল পেতে। সবচেয়ে উদ্বেগের কথা, অনেকেই এখন আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে খাদ্যতালিকা থেকে অনেক পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়েছে। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। কারণ খাদ্য তালিকা সংক্ষিপ্ত করা মানে দেশ ও জাতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলা। পুষ্টি ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে না পারলে আজকের প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে অক্ষম একটি প্রজন্ম হয়ে বেড়ে উঠবে। এর খেসারত নিশ্চয়ই এই জাতিকে দিতে হবে। অথর্ব একটি জাতি নিয়ে বেশি দূর এগোনোর আশা করাও মূর্খতার শামিল।

২৭ আগস্ট নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নিত্যপণ্যের বাজার এখন হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে! বাড়ন্ত দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা সবাই। আয়ের সিংহভাগই চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই- যার দাম নাগালের বাইরে নয়। তাই মাস শেষ হওয়ার আগেই টান পড়ছে পকেটে। তিন বেলা খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই এখন কঠিন। আর এই কঠিন অবস্থাই মানুষকে মানসিক চাপে ফেলছে। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। কারণ একজন মানুষকে জীবনধারণের জন্য শুধু খেলে পরলেই চলে না। তার পরিবারের সব সদস্যের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্বও নিতে হয়। এসব মিটিয়েও আগামীর জন্য জরুরি প্রয়োজনে সঞ্চয়ের কথাও মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের বর্তমান উচ্চমূল্যের কারণে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটা বা টিকে থাকাটাই যাদের কাছে মুখ্য-তাদের কাছে সঞ্চয়ের কথা চিন্তা করাই তো বিলাসিতা। লক্ষণীয় যে চাল, ডাল, আলু, তেল ও ডিম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে অন্যতম। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার এই পণ্যগুলো কিনতে হয়। আর সিন্ডিকেট গোষ্ঠী এগুলোর দাম বাড়িয়ে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়।

বছরজুড়ে উল্লেখিত পণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণ করেন সিন্ডিকেটের লোকজন। কৌশলে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকারের বাজার মনিটরিং সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারে তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ টাকা। ডালের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা। সবচেয়ে কম বেড়েছে চালের দাম। তাও কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। যদিও টিসিবির উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য।

বাজারের দামের সঙ্গে টিসিবির মূল্য তালিকায় উল্লেখ করা দামের তারতম্যের বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মুখপাত্র টিসিবির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাজার পরিদর্শন করেন। রাজধানীর ১৫টির বেশি বাজারে গিয়ে পণ্যের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দামের এভারেজ করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। তারপরও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে-কমে। তবে সেই দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি আমাদের প্রতিবেদনে আসে না। এ কারণে দামে কিছু তারতম্য থাকতে পারে-এমন মন্তব্য করেন।

দেশের উন্নতি হয়েছে এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। সেইসঙ্গে পণ্যের দামও সাধারণের নাগালে নেই এটাও বাস্তবতা। যে সিন্ডিকেটের কারণে জনসাধারণের এই দুর্ভোগ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাটা জরুরি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ