তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী একফোঁটা বৃষ্টির জন্য কাতর হয়েছিল। তারা বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কোথাও কোনো এক কোণে জমে থাকা মেঘ খুঁজেছে। না পেয়ে হতাশ হয়েছে। কিন্তু আশা ছাড়েনি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ঋতুর সঙ্গে বসবাস করে অভ্যস্ত। গ্রীষ্মকালে গরম পড়বে- এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আষাঢ়েও বৃষ্টি হবে না- এটা তো হয় না। কারণ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আষাঢ় মাস বর্ষাকাল। কিন্তু পুরো বর্ষাকালজুড়ে বৃষ্টির দেখা মেলেইনি বলতে গেলে। শ্রাবণ মাসেরও প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে বৃষ্টির দেখা মিলেছে। এর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণ অবশ্যই দায়ী। বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি ভীষণভাবে বদলে গেছে এরই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিপত্তি হচ্ছে, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করলে এবং অবশেষে বৃষ্টির দেখা পেলেও নতুন বিপত্তি শুরু হয় রাজধানীর সড়কজুড়ে। খুব সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। কারণ রাস্তায় পানি জমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন পানিতে ডুবে থাকা অংশে যেতে চায় না। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসে। দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়।
রাজধানীবাসীদের শতভাগ সেবা দেয়ার জন্য নগরীকে দুই ভাগ করা হয়েছে। উত্তর আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামের এই দুটি সংস্থার উদ্দেশ্যই ছিল যাতে পুরো নগরীর সবাইকে সেবার আওতায় আনা যায়। কিন্তু বাস্তব চিত্র সন্তোষজনক এমন মন্তব্য করার পরিস্থিতি এখনও হয়নি বলেই মনে করেন অধিকাংশ নগরবাসী। তাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই তাদের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হচ্ছে। এতে দৈনন্দিন চলাফেরা শুধু যে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। বর্ষার পানি জমে সেখানে এডিস মশার বংশবৃদ্ধিও হচ্ছে। এক বছরের চেয়ে পরের বছর ডেঙ্গুর আক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড অতিক্রম করে যাচ্ছে।
অতীতে টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহর তলিয়ে যেত এবং সে পানি সরে যেতে সময়ও নিত দুই থেকে চারদিন। কিন্তু এখন স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতেই জমে যাচ্ছে পানি। নগরবাসী পড়ছেন দুর্ভোগে। যারা নিজস্ব গাড়িতে চড়েন না, তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা আন্দাজ করা কঠিন কিছু নয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অফিসগামীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। আর যদি সিরিয়াস কোনো রোগী নিয়ে কাউকে হাসপাতালে ছুটতে হয় তাহলে জলাবদ্ধতাজনিত তীব্র যানজটে পড়ে নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসপর্মণ করা ছাড়া ভিন্ন উপায় থাকবে না। কিন্তু এটা তো হতে পারে না। নগরবাসী তাদের প্রতিটি সেবার জন্য নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাস ছাড়া কিছু মিলছে না। নগরের জলাবদ্ধতা নিয়ে এবারও দুই নগরপিতা একই রকম আশ্বাস দিয়েছেন। আদৌ তা বাস্তবায়ন হবে কিনা সে সংশয় কাটিয়ে উঠতে আস্থা পাচ্ছেন না অনেকেই। কারণ এর আগেও এরকম আশ্বাস তারা দিয়েছেন। এই নগরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু জনগণের জন্য তা কতটা অনুকূল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ভুক্তভোগীদের। কারণ অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে তাও পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে বলে মনে করছেন না তারা। অতীতে যখন খাল-বিল, ডোবা-নালা দখরদারিত্বে চলে যাচ্ছিল তখন থেকেই এর প্রতিবাদ করা জরুরি ছিল। কিন্তু তা তো হয়ইনি। বরং তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে নগর থেকে পানি নেমে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
একটি দেশের রাজধানী হবে নান্দনিক। পরিকল্পিত, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি এবং অর্থনৈতিক গতিময়তার সম্পর্ক জড়িত। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব এই দুর্ভোগের অবসান হোক।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ