ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
নতুন নামে সক্রিয় জঙ্গিরা

দায়িত্বশীল মহলকে সতর্ক থাকতে হবে

প্রকাশনার সময়: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৭

দেশ এগিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই এগিয়েছে। যারা দেশ পরিচালনা করছেন তাদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা রকম অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু যখন তখন বোমাতঙ্ক থেকে তারা মুক্তি দিয়েছেন এই দেশের মানুষকে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, মাত্র কয়েক বছর আগেই একজন মানুষ বাসা থেকে বেরিয়ে নিরাপদে, অক্ষত দেহে আবার বাসায় ফিরতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা ছিল না। যখন তখন যেখানে সেখানে বোম ফুটত, ককটেল ফুটত, বিরোধী মতকে অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেয়া হতো, হাত পায়ের রগ কেটে ফেলে আজীবন পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হতো।

এক কথায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কিন্তু তখন যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা চোখ বন্ধ করে জঙ্গিবাদকে অস্বীকার করতেন। অথচ চোখের সামনে বাংলা ভাই ছিল জঙ্গিবাদের মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। তখন তারা বলতেন, বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। কিন্তু তারা জানে না, মিডিয়া কিছু সৃষ্টি করে না। মিডিয়া সত্যকে মানুষের সামনে নিয়ে আসে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর অনুধাবন করা যায় যে, জঙ্গিবাদ কত ব্যাপক আকারে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে।

বর্তমান সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা জনগণের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তবে এখনও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতরা বারবার সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করলেও আমাদের দেশের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক নজর এড়িয়ে কিছুই করতে পারছে না তারা। যদিও বারবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

১৭ আগস্ট নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর পরও দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক যায়নি। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সদস্য। এরই মধ্যে গত বছরের শেষের দিকে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পর গত ৯ আগস্ট এ জঙ্গি সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরই মধ্যে গত ১৩ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পাহাড়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে আরেকটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব মিলেছে। ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান নেতাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব সংগঠনের বাইরে অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের প্রচারণা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা হামলার কৌশল রপ্ত করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ৬৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৬টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৩২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। গ্রেপ্তার আসামির মধ্যে ৩৫৮ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড রায় দেয়া হয়েছে ১৫ জনকে। সরকারের এসব পদক্ষেপের কারণে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িতরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে তারা থেমে থাকেনি। বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন করে হামলা করে দেশের ভিতর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টা তারা চালিয়েই যাচ্ছে। এদের ইন্ধন দিচ্ছে এদেশের স্বাধীনতা যারা চায়নি সেই গোষ্ঠী। এদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল মহলকে সব সময়ই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মনে করি।

নয়া শতাব্দী/ এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ