ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
ডেঙ্গুর বিস্তৃতি ‘অস্বীকার’

বাস্তবতা মেনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশনার সময়: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গুর বিস্তার। শুধু ঢাকা শহর নয়, পুরো দেশই ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় আক্রান্ত। দিন দিন তা আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতিক্রান্ত করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল তা স্বীকার তো করছেই না বরং অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন। সমস্যাকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

সারা দেশে প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেক হাসপাতালে সিট নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশে মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আবার অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ দিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ডেঙ্গু সংক্রান্ত আপডেট দিয়ে সর্বস্তরের জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে চলমান পরিস্থিতি অস্বীকার করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

নয়া শতাব্দীর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস মারাত্মক রূপ ধারণ করে ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে এডিস মশার রাজত্ব কায়েম হয়েছে সারা দেশে। ডেঙ্গু ও এডিস মশার ভয়াবহ বিস্তৃতি হলেও তা স্বীকার করা হচ্ছে না। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম থাকলেও সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোর তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না।

সারা দেশে মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বছরে কয়েকটি সমন্বয় সভা করা হয়। এসব সভা শেষে কিছু বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়ার পর আর তেমন কোনো খবর থাকে না। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম থাকলেও ঢাকার বাইরের সংস্থাগুলোর তাও নেই। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর বা মশার উপদ্রব কমাতে তেমন কোনো খবর নেই। জনরোষ এড়াতে ঢাকার বাইরের এসব নগর সংস্থাগুলোর মশা নিয়ন্ত্রণে ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন-ই যেন ভরসা। ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যুর রেকর্ড হলেও সেদিকে আশানুরূপ নজর নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কাউকে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ঢাকা বা ঢাকার বাইরের কোথাও অংশ নিতে দেখা যায় না।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে। তাতে মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয়। সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এডিসবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে গর্ব করে ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো, ভয়াবহতার দিকে যায়নি বলে মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে, চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সাতগুণের বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক। জানা যায়, দেশে জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৫৬ জন। জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। এর মাঝে মারা গেছেন ২০৪ জন।

সুতরাং যারা এটিকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করতে চাইছেন বা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন তারা সঠিক কাজটি করছেন না বলেই মনে করি। বরং এতে জনঅসন্তুষ্টি বাড়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে বলে মনে করি। সেক্ষেত্রে বাস্তবতা স্বীকার করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াই যুক্তিযুক্ত।

নয়াশতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ