ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

উভয়পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে

প্রকাশনার সময়: ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩০

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। উচ্চশিক্ষা সেই মেরুদণ্ডকে আরও শক্তিশালী করে। দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে সহায়ক হয়। কিন্তু শিক্ষাজীবন যদি হয় নানা আশঙ্কায় পূর্ণ, তবে সেই শিক্ষার্থীরা কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে? দেশে যে কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এর সব কটি ঢাকায় নয়। একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর সব কটিই দেশের বিভিন্ন জেলায়।

যে কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা নানা জেলায় যেতে এবং অবস্থান করতে বাধ্য হয়। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শুধু ঢাকার বাসিন্দাদের সন্তানরা পড়াশোনা করে না। তারাও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে। যে যেখান থেকেই আসুক স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে রাখতে হবে, এরা মেহমান এবং উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের সেবায় এরা নিয়োজিত হবে। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরও স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে চলতে হবে। কথায় আছে, কোনো বাসায় বেড়াতে গেলে বাসায় লোকজন অতিথির জন্য তাদের রীতিনীতি বদলাবেন না— যিনি বেড়াতে যাবেন তারই দায়িত্ব বেড়াতে যাওয়া বাসার রীতিনীতি অনুসরণ করা। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সময় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণ পারস্পরিক বিদ্বেষমূলক মনোভাব। নয়া শতাব্দীর অনুসন্ধানে যে কারণগুলো বেরিয়ে এসেছে তা নিতান্তই হাস্যকর।

২০২১ সালে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি মসজিদ থেকে মাইকে গ্রামে ডাকাত পড়েছে, গ্রামের মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে বলে এলাকার সবাইকে লাঠিসোটা নিয়ে এলাকার ইজ্জত রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। এ ঘোষণা শুনে স্থানীয়দের প্রায় সবাই একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর। হামলায় আহত হন অন্তত ৪০ জন।

২০২২ সালে তুচ্ছ ঘটনায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় নিহত হন দুজন, আহত হন অর্ধশতাধিক। একই বছর গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের ওপর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালায় স্থানীয়রা। হামলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রক্টর, শিক্ষকসহ আহত হন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী। সব শেষ চলতি বছরের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। গত দুবছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চালচলন, পোশাক-আশাক, কথাবার্তা কিছুই পছন্দ করেন না। যেসব মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে আসে তাদের সবাইকেই খারাপ চরিত্রের মেয়ে বলে মনে করে। ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করে, চলাফেরা করে এটাও তাদের পছন্দ নয়। আবার অনেক শিক্ষার্থী বিড়াল, কুকুর পোষে— তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এলে সেগুলো সঙ্গে করে নিয়ে আসে, পরনের পোশাক হয় অপেক্ষাকৃত স্বল্প।

যেমন— থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট, সেন্ডো গেঞ্জি এসব। তারা আবার এটাও মনে করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের কারণে স্থানীয় মেয়েরাও বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে, খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তারা কখনও এটা ভাবে না যে, তাদের এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এটি খুব গর্বের বিষয়। এখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে বলেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাভজনক হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা না থাকলে তারাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায় ধস নামবে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরও মাথায় রাখতে হবে, স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চলতে হবে। কারণ প্রতিটি এলাকার একটি নিজস্ব নিয়মকানুন, দর্শন রয়েছে। সেগুলো মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সহজ হয়।

আমরা চাই, দেশের কোথাও যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের কোনো দ্বন্দ্ব সংঘাত না হয়। দুই পক্ষকেই তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। স্থানীয় প্রভাবশালী যারা, তারা এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ