ঢাকা শহরে যে কটি সমস্যা প্রকট বলে গণ্য এর মধ্যে পানি সংকট প্রথম সারির। এ কথা সত্য, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি লোকের বসবাস এ শহরে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৌলিকসেবা নিশ্চিত করা কঠিনই বটে। তবুও সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েও এর সুরাহা করতে পারছেন না। উদ্বেগের বিষয় হলো, সব সমস্যারই বিকল্প সমাধান আছে বা থাকতে পারে— পানি সমস্যার সমাধান কেবল পানির অবাধ প্রবাহ দিয়েই সম্ভব। এছাড়া বিকল্প হয় না। কিন্তু ঢাকা শহরে বছর জুড়েই কোনো না কোনো এলাকায় তীব্র পানি সংকট থাকে।
সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে পানির দাবিতে খালি কলস, পাতিল, ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করতেও দেখি আমরা। কোনো কোনো সময় সারারাত জেগে অনেককে পানি সংগ্রহ করতে হয়, অথবা পড়শী অথবা পাশের এলাকা থেকে পানি আনতে হয় কিংবা পানি কিনতে হয়। ওয়াসার গাড়ি পানি ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে অনেকে পানি পায়, অনেকে পায়ই না। মুশকিল হলো, পানি এমন একটা পণ্য যা কাউকে দিয়ে নিজে বিপদে পড়ার মতো ঝুঁকি কেউ নিতে চায় না।
১৪ মার্চ নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছে, ট্যাব বা কলে পানি না থাকায় বিকল্প হিসেবে অন্য জোনের বাসিন্দাদের বাসা থেকে পানি এনে কোনো রকমে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দারা। এ এলাকায় পানি সংকট এতটাই চরম আকার ধারণ করেছে যে, দিন-রাত মিলিয়ে এক বালতি পানি জমা করাও বিশাল সাফল্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে টানা পানির সমস্যা থাকলেও গত ১০/১২ দিনে তা চরম আকার ধারণ করেছে। সমস্যা সমাধানে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী/উপপ্রধান কর্মকর্তা বরাবর আবেদনপত্র জমা দিয়েও মিলছে না সাড়া। তথ্য বলছে, রায়েরবাজারের হাশেম খান রোড, নিমতলি, টালি অফিস এলাকায় পানি সংকট তীব্র। এছাড়া রায়েরবাজারের পশ্চিম পাশে আবাসিক এলাকা, হজরত ওমর গলির চিত্র আরও ভয়াবহ। এ এলাকায় পানির দেখা না মেলায় দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে সারতে হচ্ছে জরুরি কাজ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা গত দুই বছর ধরে পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন। তাদের অবস্থা এমন যে, প্রায় সারাদিনে পানি নেই। ফলে কেনা পানি দিয়ে সারতে হচ্ছে রান্না ও খাওয়ার কাজ। কিন্তু খাওয়া আর রান্না করা ছাড়াও সারাদিনের পানির চাহিদা কম নয়। বাথরুম ও গোসলের পানির জন্য তাদের রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়, পানি কখন আসবে আর জমা করে রাখবেন।
উল্লেখিত এলাকায় দুই বছর ধরে পানির সমস্যা বিষয়ে আগের কমিশনার তো বটেই ওয়াসা এবং বর্তমান কাউন্সিলর অবগত। কিন্তু তারা পাম্প করার জন্য জায়গা চান-স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন সাধারণ মানুষ জায়গা কোথায় পাবেন? পরবর্তীতে শোনা যায় যে বর্তমান কাউন্সিলর নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এখানে একটা পাম্প হবে। তবে এলাকাবাসীর অনেকেই এ বিষয়ে অবগত নন।
পর্যাপ্ত পানি পাওয়া তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় পানিও যারা পাচ্ছেন না, মাস শেষে ওয়াসাকে কিন্তু ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে রাতভর মটর চালিয়ে রেখেও পানি না মেলায় ঘাটতি তো মিটছেই না উপরন্তু মটর নষ্ট হচ্ছে।
সব কিছুর বিকল্প হলেও পানির হয় না। পানির অপর নাম জীবন-এর মাহাত্ম্য কেবল পানির অভাবে পড়লেই বোঝা যায়। উল্লিখিত এলাকা নয়, নগরীর পানি সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এ প্রত্যাশা।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ