ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাপিয়া থেকে হেলেনা, এরপর কে?

প্রকাশনার সময়: ৩০ জুলাই ২০২১, ১৬:৫৯ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১, ১৭:০৩

আপনাদের মনে আছে পাপিয়ার কথা? অবৈধ অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও নারীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অনৈতিক ব্যবসাসহ কী করেন নাই তিনি। রাজার হালে যার ছিল চলাচল তার এখন শ্রীঘরে বসবাস। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে স্বামীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন র‌্যাব।

হেলেনা জাহাঙ্গীর যাকে নাকি মানুষ সিস্টার হেলেনা, মাদার হেলেনা, বাংলার মাদার তেরেসা বলে ডাকতেন সেই হেলেনা মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কোটি টাকার বনে গেছেন। লোক দেখানো জনসেবামূলক কাজ করে সেলিব্রেটিদের খাতায় নাম লেখান তিনি। অভিযোগ রয়েছে ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ নামে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া তার একটি ‘জয়যাত্রা’নামে আইপি টেলিভিশন চ্যানেলও রয়েছে যদিও সেই টেলিভিশনের বৈধ কোনো কাগজপত্র পাননি র‌্যাব। অভিযোগ রয়েছে ওই টেলিভিশনে জেলা-উপজেলা এমনকি দেশের বাহিরেও প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

গতকাল তার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, বিদেশি মুদ্রা, চাকু, মোবাইল সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, এটিএম কার্ড ও হরিণের চামড়া।

সম্প্রতি তিনি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী করেন সেখানে তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সংগঠনটিতে আরও সদস্য নিয়োগেও তিনি বিজ্ঞাপন দেন।

বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নজরে আসলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে আওয়ামী লীগের নারী বিষয়ক উপকমিটি থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দলটি।

ভাগ্যের কি লীলা খেলা আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁস হতে থাকে হেলেনার একের পর এক অপকর্ম। এর পরপরই তিনি টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফেসবুকে লাইভে এসে আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ তথা পুরুষজাতিকে হেও করে অনেক কথা বলেন। যে ভিডিও রীতিমত ভাইরাল।

এবার আসি মূল মন্তব্যে পাপিয়া থেকে শুরু করে হেলেনা জাহাঙ্গীর এরা আসলে কী চান? তাদের কর্মকাণ্ডে যথারীতি আওয়ামী লীগ বিব্রত। এই ঘটনা নারী রাজনীতিবিদদের জন্যও এক অশনি সংকেত বলে আমি মনে করি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পা দিয়েই অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন এরা। রাজনীতির আড়ালে এদের চেহারা যে কতটা বীভৎস হতে পারে তা এই দুই একটি ঘটনা আমাদের বুজিয়ে দেয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাদের কতই না খ্যাতী ছিল। গতকাল যিনি আদরণীয়–বরণীয় নেত্রী, আজ তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত। যেসব গল্প-কাহিনী আমরা সিনেমায় দেখতে পেতাম, সেসব এখন তাজা বাস্তব খবর। বাংলাদেশের রাজনৈতিক গল্প কাহিনী বাস্তবতার চেয়েও অনেক রঙিন। আমরাও বাঙালি পেয়েছি একটা ইস্যু কয়েকদিন এসব নিয়েই মেতে থাকবো ফেসবুকে, চায়ের আড্ডায়। এর থেকেও যে আরও কঠিন রূপ ও করুণ বাস্তবতা আমাদের সমাজে আছে সেটা ভাবছেন না কেহ।

আমার ছোট্ট মনে ছোট্ট একটি প্রশ্ন- তাদের পেছনে কে কে আছে, তা বের হোক, তা সবাই জানতে চায়। আমরা নীরব দর্শক হয়ে আর থাকতে চাই না। জানতে চাই- ঘটনার পেছনের ঘটনা। রহস্যের মধ্যের রহস্য জানার সময় হয়েছে। প্রতিটি বড় অপরাধের তলায় হাত দিলেই দেখা যায়, কী সব ভয়ংকর খেলা সেখানে চলছে। অন্যায়, দুর্নীতি, অনাচারে পুরো সমাজটাকেই ছেয়ে ফেলেছে, হেলেনা-পাপিয়ারা তার ডালপালা মাত্র। এসব হেলেনারা যখন ভুল জায়গায় গিয়ে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তখন তাদের ঝেড়ে ফেলা হয়। কিন্তু এদের পেছনের কর্তারা দুর্বল হয় না, বরং তারা আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে অপরাধের নতুন কৌশল খুঁজে। সুতরাং মাদকবিরোধী অভিযান, শুদ্ধি অভিযান ইত্যাদি দেখে তাই আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই।

লেখক: সহ-সম্পাদক, নয়া শতাব্দী

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ