ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশনার সময়: ১৭ মে ২০২২, ১০:৪৬

বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্বই এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সামনে আছে। করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, পরিবহন খরচ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আরোপিত লকডাউনও প্রভাব ফেলছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে। যার প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম স্থানীয় বাজারে ডিজেল, কেরোসিনসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। সবকিছু মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি এবং এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

জিনিসপত্রের দাম বাড়ার এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়; বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএওর মতে, গত এক দশকের মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি বিশ্ব। ফোর্বসের মতে, আশির দশকের পর এই প্রথম এত দ্রুতগতিতে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। আর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য রফতানি ব্যাহত হওয়ায় এ বছরের মার্চ মাসে বিশ্বে খাবারের উচ্চমূল্যে নতুন রেকর্ড গড়েছে বলে জানিয়েছে এফএও। বিশ্ববাজারে সব খাদ্যপণ্যের দাম ৩২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

করোনাভাইরাস আর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত বা গরিব কোনো দেশই উচ্চ মূল্যস্ফীতির আঘাত থেকে বাঁচতে পারেনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড গড়েছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে সাত শতাংশে ঠেকেছে।

আর যুক্তরাজ্যে জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিক্ষোভও করেছে মানুষ। দাতব্য সংস্থা ফুড ফাউন্ডেশনের জরিপে উঠে এসেছে, দেশটির লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন তিন বেলা খেতে পারছেন না। গত মাসে পুরো এক দিন কিছু না খেয়ে কেটেছে অন্তত ২০ লাখ মানুষের। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ নাগরিক কোনো না কোনো বেলা খাবার খেতে পারেননি বা তাদের কাছে খাবার কেনার মতো অর্থ ছিল না।

ইউরোজোনে ইউরো ব্যবহার করা ১৯টি দেশে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল পাঁচ শতাংশের বেশি, যা গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ সাপ্লাই চেইন। করোনা মহামারির কারণে সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে জড়িতদের অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে, আবার অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। দেশে দেশে লকডাউন উঠে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে পরিবহন সংকট। শ্রমিক সংকটও প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকটও। করোনায় চাহিদা ও দাম কমে যাওয়ায় দিনপ্রতি এক কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয় ওপেকভুক্ত দেশগুলো। যার প্রভাব এখন দৃশ্যমান। এর পাশাপাশি ইকুয়েডর, কাজাখস্তান ও লিবিয়ার মতো দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেও।

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন হলেও নানা সংস্থার মতে, দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের মতো। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও ফেব্রুয়ারিতেই মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেশিই থাকবে।

দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। জোরদার করতে হবে বাজারব্যবস্থায় মনিটরিং। মজুদদারি, পণ্য বন্দরে রেখে দেয়া, লোকাল মার্কেটে (স্থানীয় বাজার) চাঁদাবাজি, পুলিশি হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে দাম বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ