ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুলাই ২০২১, ১৬:০৫ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১, ২০:৩৮

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তাতে মানুষের আতঙ্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়েও সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে আবার নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু। সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৪৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ঢাকাতেই বেশী। প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ইশতেহারে প্রধান চ্যালেঞ্জ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও মশার উপদ্রব কমানোর টার্গেট থাকলেও তা ফিকে গেছে বলে দাবি করছেন নগরবাসী।

তারা বলছেন, মশা নিধনে সরকারের বাজেট বাড়লেও কোনোভাবেই কমছে না মশা। বরং মশার উপদ্রব আগের চেয়ে আরও বেশী। রাতে তো বটেই, দিনেও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।

রাজধানীর দুই সিটিতে মশক নিধনে অর্থের বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছরই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে কিন্তু তারপরও মশা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশন ১০০ কোটি টাকার ওপরে মশা নিধনের খরচ দেখালেও মশা নিয়ন্ত্রণ আনতে কোনো বছরই সক্ষম হননি।

বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এতো টাকা কোথায় যাচ্ছে? কার পকেট ভাড়ি হচ্ছে?

তবে সিটি করপোরেশন দাবি করছেন, বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে মশা বাড়া বা কমার কোনো সম্পর্ক নেই, কেবল জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমেই মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। সঠিকভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। করোনাকালীন এই সময়ে ডেঙ্গু ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসা আলাদা হাসপাতালে দেওয়া হবে।’

অন্যদিকে প্রতিনিয়ত যেভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আগামি এক সপ্তাহে কী হতে যাচ্ছে কেউ জানে না। করোনার ভারতীয় ‘ডেল্টা’ ধরণ যেভাবে দ্রুত মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে তাতে বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে সামনে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঈদযাত্রা ও ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়তো অপেক্ষা করছে।

এরই মধ্যে সরকারের দেওয়ার ঈদের পর ‘কঠোর লকডাউনে’ সংক্রমণ কতটা কমে আসবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কারণ কেহ সহজে এই লকডাউনের বিধিনিষেধ মানতে চান না। সরকারি নিয়ম অমান্য করে মানুষ ছুটছেন জীবিকার তাগিদে। মানুষের অভ্যাস এমন হয়ে গেছে যে, জেল, জরিমানা যাই হোক আগে জীবিকা বাঁচাতে হবে।

করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রবণতা আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবার একেইতো বেহাল অবস্থা তার মধ্যে আবার ডেঙ্গু নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে। অবশ্য নতুন বললে ভুল হবে প্রতি বছরই ডেঙ্গু আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করে যাচ্ছে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শুধু ঢাকা মহানগরীর লার্ভা নিধন কার্যক্রম সফল হলেই ডেঙ্গু প্রকোপ কমবে- এমন আশা করা বোকামি। কেননা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যানবাহনসহ নানা মাধ্যমে এডিস মশা খুব সহজেই ঢাকায় আসতে পারে।

এ ছাড়া বিভিন্ন কনটেইনারে জমে থাকা এডিস মশার ডিম ও লার্ভা পরিবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লার্ভা নিধনে ঢাকা মহানগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও গ্রাম-গঞ্জ সবখানেই একযোগে অভিযান চালানো জরুরি।

অথচ জেলা শহরেও এখনো কোনো তৎপরতা শুরু হয়নি। স্বল্পসংখ্যক জেলায় ডিসিদের উদ্যোগে এডিস মশা ও লার্ভা নিধনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও তা এখনো নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় লার্ভা নিধনের মাধ্যমে সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সত্যিকার অর্থেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন কীটতত্ত্ববিদরা।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন লার্ভা নিধনে চিরুনি অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলেও বাস্তবিক অর্থে তা কতটা কার্যকর তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। এর আগে একবার খোদ উচ্চ আদালতই এডিস মশা ও লার্ভা নিধনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

লেখক: সহ-সম্পাদক, নয়া শতাব্দী

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ