অভিবাসী— এই পরিভাষাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। অভিবাসী সাধারণত এমন কাউকে বলা হয়, যে উন্নত জীবনযাত্রা বা কর্মসংস্থানের খোঁজে স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। অর্থাৎ, কেউ যদি বাংলাদেশের অধিবাসী হন এবং বছরে কয়েকমাস কাজের খোঁজে বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে অভিবাসী বলা যাবে। জাতিসংঘের প্রকাশিত বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি।
২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে আটশ’ কোটিতে। জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে মোট জনসংখ্যা একশ’ কোটি হতে কয়েক হাজার বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু এখন তা দ্রুতই বাড়ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি এবং ২১০০ সালে তা এক হাজার ৯০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। ২০১১ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা সাতশ’ কোটিতে পৌঁছায় যেটি এখন সেটা ৭৭০ কোটি। অর্থাৎ গত প্রায় ৯ বছরে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আরো ৭০ কোটি মানুষ যুক্ত হয়েছে।
আগামী ১০ বছরে তা ৮০ কোটিরও বেশি হবে বলে জাতিসংঘের ধারণা। এর নেপথ্যে প্রজননকালীন মৃত্যুর হার হ্রাস, প্রজনন হার বৃদ্ধি, নগরায়ণ এবং বিস্তৃত পরিসরে অভিবাসীর মতো বিষয়গুলোকে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। নিকট অতীতের চেয়ে এখন মানুষের প্রজনন হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে। জাতিসংঘের ‘গ্লোবাল পপুলেশন ট্রেন্ড’ অনুযায়ী ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে নারীরা গড়ে ৪ দশমিক ৫টি সন্তান জন্ম দিতেন। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে এই হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫ এ।
তবে বৈশ্বিক গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৯০ এর দশকে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৪ দশমিক ৬ বছর। ২০১৯ সালে তা ৭২ দশমিক ৬ বছর। এ ছাড়া নগরায়ণের বিষয়টিও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বে মোট জনসংখ্যার মধ্যে গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। জাতিসংঘ বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ বসত হবে শহরে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের বাঙালিরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিপুল সংখ্যায় ছড়িয়ে পড়ে। অভিবাসী জীবনে আত্তীকরণ ও অভিযোজনে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। আর্থিক, বৈষয়িক এবং পেশাগত দিকে বিভিন্ন মাত্রায় সাফল্য লাভ সত্যেও নতুন দেশের সংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক মূলধারায় অভিযোজনে রয়েছে জানা-অজানা বিপত্তি ও প্রতিকূলতা।
অভিবাসী বাঙালির চেতন এবং অর্ধ-চেতন মানসে বিরাজ করে এক অদ্ভুত সংঘাত। পেছনে ফেলে আসা দেশের সংস্কৃতি বনাম অভিবাসনের নতুন সংস্কৃতি। এই সংঘাতের পথ ধরে বাসা বাঁধে উৎকণ্ঠা, নৈরাশ্য এবং একাকীত্ব। নতুন দেশ যদি হয় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায়, তাহলে এই সংঘাতের মাত্রা হয় বিচিত্র এবং বহমান। বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম ও বর্ণের অদ্ভুত মিলনমেলা ক্রমবর্ধিত হারে সক্রিয়মান এবং পরিবর্তনশীল।
তথাপি এসব দেশের গড়পড়তা মূল্যবোধ ও জীবনধারায় রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে সাধারণভাবে গৃহীত উপাদানসমূহ, যার ওপর ভিত্তি করেই আবর্তিত হয় পরিবর্তন ও পরিমার্জনের অমোঘ ধারা। সময়ের অনিরুদ্ধ প্রবাহে নিজের অজান্তে অভিবাসীরা ক্রমশ পরিবর্তনের ধারায় সিক্ত হতে থাকে। কখনো তা ঘটে নিজের অজান্তে। আবার কেউ কেউ রুখে দাঁড়ায় পরিবর্তনের খরস্রোতে। ১৮ ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে বিএমইটি বঙ্গবন্ধু ওয়াল অব ফেম তৈরি করে। ওয়ালে শ্রম অভিবাসনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা-অভিবাসনে আনবো মর্যাদা ও নৈতিকতা’ নামক স্লোগানটি সন্নিবেশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রকাশিত ‘বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২’ এ বৈশ্বিক অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও রেমিট্যান্স প্রেরণে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের অভিবাসন-বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ২৮ কোটি ১০ লাখ অভিবাসী রয়েছে।
এদের মধ্যে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮৪ মিলিয়ন থেকে ২০২০ সালে ২৮১ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা দুই মিলিয়নের মতো কম ছিল। এ ছাড়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী বসবাস করা বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭৪ লাখ। বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করেও প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ২০১৯ সালে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দেশে পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ এসেছে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে। মূলত গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোয় ‘স্বল্প দক্ষ’ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তারা। প্রবাসীদের পাঠানো এ রেমিট্যান্স জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস।
এ ব্যাপারে আইওএম বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহের ওপর মহামারির নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
অভিবাসীরা উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন এবং তারপর নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করেন। বৈশ্বিক অভিবাসন সম্পর্কে আইওএমের মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, আমরা একটি বৈপরীত্য লক্ষ করছি, যা মানব ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে শতকোটি মানুষ আটকা পড়েছে। তার পরও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষ গৃহহীন হতে বাধ্য হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন, যা ২০২০ সালে ১ দশমিক ৮ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দুর্যোগ, সংঘাত ও সহিংসতার ফলে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেড়ে ৪০ দশমিক ৫ মিলিয়ন হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩১ দশমিক ৫ মিলিয়ন। উল্লেখ্য, দেশে অভিবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে নগদ প্রণোদনা স্কিমের সর্বোচ্চ সীমা তিনগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে।
এর প্রভাবে রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ওপর ২ শতাংশ বোনাস পান, যার সর্বোচ্চ সীমা ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত। এ ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোয় উৎসাহ দিতে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে।
বড় রাষ্ট্রগুলোর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং জ্বালানি-অর্থনৈতিক কৌশলের কারণে একে একে বিপর্যস্ত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো। আর্থিক, বৈষয়িক এবং পেশাগত সাফল্যের মুঠো মুঠো অঞ্জলি প্রসারিত হাতে ‘শতরঞ্জির ব্যাগে’ লুফে নেন প্রবাসীরা। অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক বিজয় বৈজয়ন্তীর দেবী তার সঞ্চয় মুক্ত হাতে ঢেলে দেন প্রবাস কর্মীদের। কিন্তু প্রবাসের নিঃসঙ্গতা এবং দেশে ফেলে আসা আনন্দ-বেদনার মধুর স্মৃতি তাদের সমর্পণ করে এক অনিন্দ্য সৌন্দর্যের তরঙ্গে প্লাবিত বাংলা নামের এক মোহনীয় মানসীর মোলায়েম আঁচলে।
প্রবাস জীবনে এই অনুভূতিগুলো ক্ষণস্থায়ী। অর্থ উপার্জন এবং কাজের তাগিদে সকল প্রয়াস আবার নিয়োজিত হয় অভিবাসী জীবনের প্রতিটি বৈষয়িক শাখা-প্রশাখায়। মনের মণিকোঠায় তীব্র হয় অসীম শূন্যতা। একটি শূন্য বৃত্তে আলবে ক্যামুর গ্রিক চরিত্র সিসিফাসের মতো তাদের বিচরণ। শূন্যতা পূরণের আশায় এবং সাধনায় তারা খুঁজে বেড়ান এক নিরাপদ আশ্রয়। অনেক সময় অভিযোজনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার বাধা-বিপত্তি প্রতিকূলতাকে জয় না করে অনেককে গড়ে তুলতে হয় সংস্কৃতির অন্ধকার যুগের এক সমান্তরাল পৃথিবী। মূলধারা থেকে নিদারুণ বিচ্ছিন্ন এক গৌণ পৃথিবী। অভিবাসী দেশের পরিচয় ভুলে অন্য এক আত্মপরিচয়ে বিভ্রান্ত হতে হয় তাদের।
এর ফলে প্রজন্মের মনন ও মানসিকতায় চলে সংঘাতের নিষ্ঠুর প্রদাহ। অভিযোজন ও আত্তীকরণের মাঝে থেকে যায় নিদারুণ অপঘাত। ফেলে আসা দেশের জীবনধারা অথবা সংস্কৃতির ললিত উপাদান অভিশংসিত দেশের পরীক্ষিত সত্তার সঙ্গে যুগলবন্দি করে এক অপূর্ব মূর্ছনা সৃষ্টি করা থেকে তারা বঞ্চিত। মহিমান্বিত, শিক্ষায় উচ্চাসনে সমাহিত, মানবিক গুণে অলংকৃত হয়েও নিয়ত তাদের পীড়া দেয় এক অদ্ভুত যন্ত্রণা।
এজন্য কারা অপরাধী? সমান্তরাল পৃথিবীর গৌণ প্রকোষ্ঠে তাদের বন্দি করেছে কারা? এর জবাবদিহির সময় প্রায় উত্তীর্ণ। এই ব্যর্থতার উত্তর খুঁজে পেতে কম্পিত চিত্তে অবগাহন করতে হবে বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক মার্টিন হাইদেগারের রচিত ১৯২৭ সালে প্রকাশিত পুস্তক ‘বিরাজ এবং সময়’-এর বিমূর্ত পাতায়। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যক্তি হিসেবে মানুষের অস্তিত্ব শুধু জৈবিক দেহ ও তার অনুভূতি নয়। হাইদেগার ব্যক্তি মানুষের বিরাজমানতা অথবা অস্তিত্ব প্রকাশে একটি নতুন শব্দ চয়ন করেছেন। তা হলো ‘দাসেইন’ (Dasein)। আক্ষরিকভাবে ‘দাসেইন’-এর অর্থ হলো ‘সেখানে থাকার’ অথবা ‘being there’। সেখান থেকে কাজের মাধ্যমে মানুষ হিসাবে সত্তার প্রকাশ। সময়ের প্রবাহে সে সত্তার নিয়ত পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তিত সত্তাটিই ব্যক্তি হিসেবে বিরাজিত। অভিবাসনে সফলতার মূল্যায়নে প্রয়োজন দুটি উপাদানের যথাযথ নির্ণয়, সম্পর্ক নির্ধারণ এবং সফল প্রয়োগ।
এ দুটি উপাদান হলো: অভিবাসনে আত্তীকরণ এবং ফেলে আসা দেশের পরম মূল্যবোধ। অভিবাসনের আত্তীকরণ যত নির্ভুলভাবে অর্জন করা হবে, ততই ফেলে আসা দেশের পরম মূল্যবোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আবার ফেলে আসা দেশের পরম মূল্যবোধ যতই কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে, আত্তীকরণ ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এই টানাপোড়নের বন্ধুর পথ চলতে চলতে অভিবাসীদের বিভিন্ন মাত্রায় আত্তীকরণ ঘটে।
প্রজন্মের ওপরও এর বোঝা ভর করে। এই দুটি উপাদানকে সুষ্ঠু আনুপাতিক হারে গ্রহণ করে অভিবাসী জীবনে তাৎক্ষণিক বাঙালি ‘দাসেইন’ হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। অবশ্য সময়ের দীর্ঘ প্রবাহে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে আত্তীকরণই মুখ্য হয়ে প্রভাব বিস্তার করে।
শোষণ, বঞ্চনা ও হয়রানিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নানান ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরির মাধ্যমে পৃথিবীকে আরো বৈচিত্র্যময় ও বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অভিবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সভ্যতার অগ্রগতিতে অভিবাসনের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের কষ্টার্জিত আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করছে। দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। যুদ্ধ, বিগ্রহ ও ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে অভিবাসন আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। অভিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও সনদে বর্ণিত বিধান যথাযথ প্রতিপালন অত্যন্ত জরুরি।
অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিরাপদ ও স্বচ্ছ করে তুলতে বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ অভিবাসনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। হয়তো ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে। দেশের এই অভাবনীয় সাফল্যের অংশীদারদের মধ্যে সকল অভিবাসী ভাই-বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শ্রম, অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য। ২০১৮ সালে অভিবাসীদের কল্যাণে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো সংস্কারের কাজও চলমান রয়েছে।
অভিবাসনে আগ্রহীদের আশানুরূপভাবে দক্ষ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে অভিবাসন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিল গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর সেফ, অর্ডারলি অ্যান্ড রেসপন্সিবল মাইগ্রেশন। অভিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই নতুন দিকনির্দেশনা নিরাপদে অভিবাসনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে বেগবান হবে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ