ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু অর্থায়নে প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা

প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৩৪

বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিলেও পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বিপদাপন্ন দরিদ্র দেশগুলোকে একই পথে চলতে অর্থায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে অধিকতর সহযোগী প্রক্রিয়া আয়ত্ত করতে তেমন কোনো ধরনের সহায়তা করছে না উন্নত দেশগুলো। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর জি-২০-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য যে ভর্তুকি দিয়েছে সে তুলনায় জলবায়ু অর্থায়নের জন্য যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। জানা যায়, ২০১৯ সালে ৮০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পাওয়া যায়; কিন্তু এর মধ্যে ৭ শতাংশ দরিদ্র দেশগুলোর কাছে পৌঁছায়, অথচ তাদের প্রয়োজন ছিল অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

সুতরাং এ বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গ্লাসগো (কপ-২৬) সম্মেলনের সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করছে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। তাছাড়া আমাদের প্রবৃদ্ধির ভাবনায় থাকবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের বিকল্প। নিঃসরণ হচ্ছে জনসংখ্যা, মাথাপিছু জিডিপি, প্রতি একক জিডিপির জন্য জ্বালানির ব্যবহার এবং ওই জ্বালানি থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ- এই চারটি ফ্যাক্টরের গুণিতক। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে হলে একটি দেশকে উপরোক্ত ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। যখন একটি দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে তলিয়ে যাবে তখন জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না।

এটি জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী দেশগুলোর মনে রাখা জরুরি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে থাকা বিশ্বকে নাড়া দিতে পেরেছে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। বিশেষ করে ৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ফোরামের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশ ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সেই সঙ্গে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবি তুলেছেন তা অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশও সমর্থন দিয়েছে। প্যারিস চুক্তির পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের পরিবেশবাদীরা তাকিয়ে ছিলেন এই সম্মেলনের দিকে। আমেরিকা বা চীন এই সম্মেলনের ব্যাপারে উদাসীন থাকলেও শেষ পর্যন্ত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশ দুটিও। এটিকে একটি আশার দিক হিসেবে বলছেন সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের জলবায়ু গবেষকরা।

তাদের মতে, শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ না হলেও ব্যর্থ হয়নি এই সম্মেলন। বিশ্ব উষ্ণতা আর বাড়তে না দেয়া, মিথেন গ্যাসের ব্যবহার কমানো, বনাঞ্চল ধ্বংস না করা, কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনাসহ নানা অর্জন এসেছে এই সম্মেলন থেকে। ১২ নভেম্বর শেষ হওয়া এই সম্মেলন নতুন করে পৃথিবীকে মনে করিয়ে দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা। জলবায়ু গবেষকরা বলছেন, এমন এক সময় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীবাসী নানাভাবে আক্রান্ত।

দুনিয়ার এক প্রান্তে যখন তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে তখন চলছে ঝড়, অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশও আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। এই সময় এমন একটি সম্মেলন খুব দরকার ছিল বলে মনে করছেন তারা। সম্মেলনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে গবেষকরা বলছেন-২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এই সম্মেলনের পরিণতি তেমনটি হবে বলে আশা করছেন তিনি। পৃথিবীর সব নেতাদের এক মঞ্চে বসিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করতে পারাটাও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিল দেয়ার ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলো কথা দিয়েছে- এটা বড় আশার দিক। কয়লা থেকে বিশ্বে মোট কার্বন নিঃসরণ হয় ৩৭ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বন্ধের আশ্বাস দিয়েছে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো। উন্নয়নশীল দেশগুলো ২০৪০-এর মধ্যে এটি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কিছু দেশ এতে রাজি নয়।

এদিকে মিথেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের ১০৩টি দেশ। চুক্তিতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মিথেন গ্যাস কমানোর উদ্যোগ নেবে দেশগুলো। কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি তাপ বাড়ায় মিথেন গ্যাস। এটি কার্যকর হলে বিশ্বের মোট তাপমাত্রার শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ কমে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন জলবায়ু তহবিলের ব্যাপারে বাংলাদেশ জোরালো ভূমিকা রেখেছে। তহবিলের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে বছরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা ছিল। এটি যেহেতু কার্যকর হয়নি।

তাই আগামী ২০২৩ সাল থেকে এটি কার্যকর করা হবে সম্মেলনে বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধ করা হবে বলে রাজি হয়েছে বিশ্বের ১১০টি দেশ। এ জন্য ১৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার তহবিলের অঙ্গীকার এসেছে। এটি করা গেলে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ কমবে। অক্সিজেন বাড়বে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ বা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বাড়তে না দেয়ার ব্যাপারে বেশিরভাগ দেশই একমত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় যেসব দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা সে বিষয়ে আরো বক্তব্য তুলে ধরবে সম্মেলনে। জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো চায় শিল্পোন্নত দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত মেনে নিয়ে নিঃসরণ কমিয়ে আনবে এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

আর্থিক সহায়তা পেতে হলে প্রতিটি দেশকে তাদের পরাকৌশল নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু তহবিলকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের পরিবর্তে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাজে লাগানো যায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

এদিকে আরেকটি অগ্রগতি হচ্ছে যে, ৪০টিরও বেশি দেশ কয়লাচালিত বিদ্যুতের প্লান্টগুলো ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ডও রয়েছে। পোল্যান্ড ২০১৮ সালে কাটোচ শহরে কপ-২৪-এর আয়োজন করেছিল, যেখানে রয়েছে কয়লার খনি। সেই সময় কপ-এর প্রতিনিধিদের একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির সীমাহীন সৌন্দর্য এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেছিল পোল্যান্ড। সেই পোল্যান্ড এখন অনুধাবন করেছে যে জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষতিকারক।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, মিথেন গ্যাসের নিঃসরণকে আগামী এক দশকের মধ্যে ২০২০ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা। এতে ৯০টি দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে, বর্তমানে তিন মিলিয়ন মাইল পাইপলাইন থেকে ছিদ্র দিয়ে যে মিথেন গ্যাস নির্গত হচ্ছে, তা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে চীন, ভারত ও রাশিয়া এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি প্রদান করেনি। তারা মনে করে, ধনী দেশগুলো এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে নিট শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আগেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে, তবু অনেকে মনে করে অন্তত উল্লেখযোগ্য কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো ভাবতে শুরু করেছে যে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে তাদের বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হবে। কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর ভারত চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য, জনপ্রতি কার্বন নিঃসরণের হিসাবে ২০১৯ সালে ভারতের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ছিল ১.৯ টন, যুক্তরাজ্যের ৫.৫ টন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ টন। এই বিষয়টির প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত আগস্ট মাসে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

কিন্তু ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও দেখা যায় বিশ্বের ৬০টি বৃহৎ ব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে। ২০২০ সালে আইএমএফের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশের সরকার জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব নয়। এবারের গ্লাসগো সম্মেলনে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তাহলো জলবায়ু অর্থায়ন, কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা, পরিবহন খাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণ। যার প্রেক্ষিতে দুই নভেম্বর শতাধিক দেশ, যারা পৃথিবীর শতকরা ৮৫ ভাগ বনাঞ্চলের অধিকারী, তারা ঘোষণা দিয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধ করবে।

বর্তমানে সারাবিশ্বে ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান বনাঞ্চল প্রতি মিনিটে ধ্বংস হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছর বনাঞ্চলকে সংরক্ষণের জন্য ১৯.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য, যারা এই বনাঞ্চল রক্ষায় প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে। ১২টি দেশ এবং বেসরকারি খাতে বেজস আর্থ ফান্ডসহ আরো কয়েকটি সংস্থা এই অর্থের জোগানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, বনাঞ্চল ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনকে ঠেকানো যাবে না।

এখানে উল্লেখ্য, সাত বছর আগে কয়েকটি দেশ একইভাবে বনাঞ্চল নিধনকে ২০২০ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যাকে বলা হয় নিউইয়র্ক ডিকলারেশন ফরেস্ট। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ বছর ব্যতিক্রম হচ্ছে, বনাঞ্চল ধ্বংসকারী অন্যতম দেশ ব্রাজিল বনাঞ্চল সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতামত হচ্ছে, সারাবিশ্বে বনাঞ্চল সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ৪৬০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন। এই অর্থায়নের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা নির্বাহের কথাও ভাবতে হবে।

উন্নত দেশগুলো তাদের করা প্রতিশ্রুতির বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যে ধরনের অর্থায়ন করে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করে থাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন নামের একটি সংস্থা। তাদের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে মোট অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৭৮.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২০১৭ সালে কেবল ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায় যেখানে দেশগুলো ৭১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড় করতে সম্মত হয়। কিন্তু অর্থায়নের এই ধরনটি দেখলে মনে হতে পারে উন্নত দেশগুলো তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বেঁধে দেয়া সময়সীমার দু’বছর আগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে একটু খতিয়ে দেখলে অনেকটাই শুভঙ্করের ফাঁকির মতো মনে হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফ্যামের একটি প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করে বলে, উন্নত দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তারা প্রায় ৫৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তন মোকিবালায় অর্থায়ন করেছে। অথচ অক্সফ্যামের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এই অর্থের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কেবল ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে। বাকি অর্থ হয় ব্যয় করা হয়েছে স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকা- কিংবা ঋণবাজারে।

সরকারি পর্যায় থেকে জলবায়ু অর্থায়ন ধীরে ধীরে বাড়ছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অর্থ বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে এনে ব্যয় করা হচ্ছে। আর এই ঋণের শর্তাবলি খুব একটা সহনশীল বা সহজ নয়। জলবায়ু ন্যায়বিচার দিক বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, অ্যাকশন এইডের বৈশ্বিক জলবায়ু বিভাগের প্রধান হারজিৎ সিং বলেন, জলবায়ু উন্নয়ন তহবিল বা অর্থায়নে ব্যাপক উন্নয়ন না হলে তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি একটি চরম বিপদের মুখে পতিত হওয়ার মতো একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। কারণ এই উপমহাদেশটি যে কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অন্যতম কেন্দ্রস্থল।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ