ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোহিঙ্গা সংকট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

প্রকাশনার সময়: ০৭ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৩৩

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। পরবর্তীতে কক্সবাজারের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জাতিসংঘের সঙ্গে একটি খসড়া চুক্তি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল, আগস্টের শুরুতে চুক্তি চূড়ান্ত হলে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবে জাতিসংঘ। তবে কিছুটা বিলম্ব হলেও অবশেষে ভাসানচরে যুক্ত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় যুক্ত হতে চুক্তি করছে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের আপত্তি ছিল।

তবে গত ১৭ মার্চ তিন দিনের সফরে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের দেখতে যান জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। ভাসানচর ঘুরে আসা জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রায় মাসখানেক পর ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান। অর্থাৎ, ভাসানচরে মানবিক সহায়তায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সায় দেয় সংস্থাটি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের প্রথম দেখতে যায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি প্রতিনিধি দল সর্বশেষ ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের দেখতে যান ঢাকায় নিযুক্ত ১০ বিদেশি রাষ্ট্রদূত।

সফর শেষে দাতা গোষ্ঠীদের এসব কূটনীতিকরাও ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানান। কিন্তু এসব ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকেই ভাবতে হবে তা ইতিবাচক না নেতিবাচক বাংলাদেশের জন্য।

বিশ্বে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটির বেশি শরণার্থী আছে। এর প্রায় ৮০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার পাশাপাশি এ শরণার্থী সমস্যা বড় ধরনের সমস্যা হিসাবে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক জাতিসংঘ, শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যে রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করেছে। তাতে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ৫৯ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে।

এ প্রস্তাবের পেছনে যে শর্ত ও উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিয়ে কূটনীতিক মহলে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে আত্তীকরণের বিষয়টি নিয়েও। সম্প্রতি রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ্ হত্যাকা-ের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ফেরত যাওয়া যত দীর্ঘ হবে রোহিঙ্গা শিবিরে নানা সমস্যা হানাহানি, গ্রুপিং, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকাও তত বাড়বে।

তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি কূটনীতিকভাবে রোহিঙ্গাদের নিজদেশে প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে সদা জাগ্রত থাকতে হবে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৭৬তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে যাওয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবিক ত্রাণ কর্মসূচি সংকুচিত হয়ে আসতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তীব্র আপত্তির কারণে মায়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার আরেকটি প্রয়াস কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা এখনো হাল ছাড়ছেন না এবং আশা করছেন রোহিঙ্গাদের রাজী করানো সম্ভব হবে। এই আশাবাদের কারণ, বাংলাদেশের কূটনৈতিক দেন-দরবারের কারণে প্রথমবারের মতো চীন এবার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে।

কিন্তু চীনকে সম্পৃক্ত করেও তেমন কোনো সাফল্যের লক্ষণ এখনো নেই। রোহিঙ্গাদের মনে নিরাপত্তার ভরসা তৈরি করতে মায়ানমার যে উল্লেখযোগ্য কিছু করছে তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর এতটা ভরসা করা কতটা সঙ্গত হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য? এ ব্যাপারে কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মায়ানমার ও বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে শুধুমাত্র চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। তবে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত নিরাপত্তাসহ আরো নানা ইস্যুতে মায়ানমার ও চীন একে অপরের ওপর অনেক নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ। চীনের সমর্থন ছাড়া মায়ানমার কর্তৃপক্ষের মদদ পাওয়া বেশ কঠিন।

কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে, বাংলাদেশের সহায়তায় চীন কতটা এগুবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশকে আরো বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করার পাশাপাশি, স্বনির্ভর হয়ে ওঠা প্রয়োজন। অন্য দেশের ওপর অতি নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের উচিত হবে অর্থনৈতিক নীতিমালা শক্তিশালী করা, দেশের অভ্যন্তরে সমর্থনের যে ঘাটি রয়েছে সেটা গড়ে তোলা। যেন বাংলাদেশ নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারে। মায়ানমার সেনাদের গণহত্যা থেকে জীবন রক্ষার্থে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। তাদের প্রত্যাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মায়ানমারে তাদের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি।

মায়ানমার এ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বা নেয়ার চেষ্টা করছে এমন কোনো তথ্য পত্র পত্রিকা বা মিডিয়ার খবরে জানা যায়নি। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি না হলে শরণার্থীরা তাদের দেশে ফেরত যেতে রাজি হবে না।

তাছাড়া জোর করেও ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। রাখাইনে পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় ও নাগরিকত্বসহ রোহিঙ্গাদের দেয়া শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে তারিখ ছিল তা ব্যর্থ হয়। চীনের সরাসরি মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মায়ানমার ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ ঠিক করলেও রাখাইনের পরিবেশ অনুকূল না থাকায় শরণার্থীরা তাদের দেশে ফেরত যেতে রাজি হয়নি। কূটনীতিকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মায়ানমার সরকারের প্রতি তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি না করে বরং বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা পরামর্শ দিচ্ছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যে মহানুভবতা ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রভাবশালী দেশসমূহ যতটা যৌক্তিক ও সহানুভূতিশীল আচরণ দেখানো উচিত তার অনুপস্থিতির পাশাপাশি শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এ যাবৎ চীনের অবস্থান হতাশাব্যাঞ্জক। পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পক্ষ থেকেও সংকট সমাধানের সহায়তামূলক কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। মায়ানমার অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে চীনের উপরে নির্ভরশীল, কিন্তু চীনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মায়ানমারের ওপর নির্ভরশীল। সমস্যা সমাধানে তাই শুধু চীনের ওপর নির্ভর উচিত হবে না বলে কূটনীতিকরা মনে করেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি।

এমনকি শীঘ্রই যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে, এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। চলতি বছর ১৯ জানুয়ারির বাংলাদেশ, মায়ানমার আর চীনের পররাষ্ট্র সচিবদের অংশগ্রহণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সংলাপ হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে আর কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। দিন যত যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ভাসানচর ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শরণার্থী কিশোর, তরুণ ও তরুণীরা বড় হচ্ছে, শিশু জন্ম হারও বেড়েই চলেছে। ফলে তাদের জীবনের নানা চাহিদাও তৈরি হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি ও ব্যবসা বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলোর ঘাটতি আশ্রয় শিবিরে পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা।

বিপুল সংখ্যক শরণার্থী কিশোর, তরুণ শিক্ষার সুযোগ না পেলে এবং কর্মক্ষম নর-নারী কাজ করতে না পারলে, বছরের পর বছর অলস জীবন যাপন করলে তাদের মধ্যে হতাশা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপরাধ প্রবণতা, মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধ আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যা অত্র অঞ্চলের আর্থসামাজিক ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গত ২৫ আগস্ট ২০২১ রোহিঙ্গা গণহত্যার চার বছর পূর্ণ হলেও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কূটনৈতিক কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ও তার জনগোষ্ঠী।

মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের কারণে সংকট আরো জটিল হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্বসম্প্রদায়ের দৃষ্টি যেন আড়ালে না পড়ে সে দিকে আমাদের কূটনীতিকদের লক্ষ রাখা উচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশে জাতিসংঘ, শরণার্থী সমস্যাসহ নানা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পরিষদ নিরাপত্তা পরিষদের মতৈক্যের ওপর নির্ভর করে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের মতৈক্যের অভাবে বিশ্বের অনেক সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সংকটও তার বাইরে নয়। সে সময় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেন। যেমন: অবিলম্বে এবং চিরতরে মায়ানমারের সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্ত বন্ধ করা,অবিলম্বে মায়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা. জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মায়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা, রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে তাদের নিজ ঘর-বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরা এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন।

প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানের কোনো সাড়া আজও পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের সামনে এখন রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানে জোর দেয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা সংকট দক্ষিণ এশিয়াসহ এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি। বিষয়টি আরো জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের সামনে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি বিষয়টি সমাধানে এককভাবে চীনের উপর নির্ভর না থেকে জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সংকট সমাধানের জন্য বিকল্প উপায়ের কথাও চিন্তা করতে হবে।

প্রথমত, রাখাইনে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা; দ্বিতীয়ত, তৃতীয় কোনো দেশে তাদের পুনর্বাসনের জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রাখা। বিশ্বের যে দেশে জনসংখ্যা কম, আর্থিকভাবে উন্নত সেসকল দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা ভাবতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এত সহজে হবার নয়। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে বিপুলসংখ্যক তরুণ বড় হচ্ছে তাদেরকে কোনো কাজে না লাগালে তারা বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে অত্র অঞ্চলের সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা আরো প্রকট হবে।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ