ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সেসব ঘটনায় এক বা একাধিক প্রাণহানিও হচ্ছে। ৩০ অক্টোবর বিকেলেও ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালানো হলে তিনজন পুলিশসহ অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এর আগেও এ ধরনের নির্বাচনি সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এটি কোনো সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে না।
আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত করার দ্বারপ্রান্তে। পালন করছি মুজিব শতবর্ষ উৎসব। অথচ এখনো নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়, নানা আলোচনা ও নানা সমালোচনা। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা ভোট প্রদান ব্যক্তির স্বাধীনতা। প্রার্থী হিসেবে অনেককে অনেকের অপছন্দ হতেই পারে। সেটি প্রকাশের জন্য ভোট প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। একইভাবে যে কেউ রাজনীতির মাঠে নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে ভোট লড়াইয়ে নামতেই পারে। সেটা একই রাজনীতির ধারক ও বাহক হতে পারে অথবা হতে পারে ভিন্ন মতের। তাই বলে সহিংসতা কেন হবে?
নির্বাচন মানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি উৎসব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চায়ের স্টলগুলোতে আড্ডা হবে ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠবে। ধূমায়িত কাপে চুমুক দিয়ে যে যার মতো করে তার মত ব্যক্ত করবে। বাদানুবাদ হবে যৌক্তিক ভাষায়। কিন্তু দেখা যায়, সারা বছর একসঙ্গে পাশাপাশি উঠবস করলেও নির্বাচন এলেই চেনা মুখগুলো কঠোর হয়ে ওঠে। একে অন্যের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। অথবা নিজ দলেরই একাধিক প্রার্থীর মধ্যে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সংঘর্ষ।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব সূচকে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে, যাচ্ছে। এই যে কষ্টার্জিত অর্জন সব ধুলায় মিশে যায় নানা কারণে সংঘাত, সহিংসতার ঘটনায়। একথা স্বীকার করতেই হবে যে, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল আশঙ্কাজনক হারে কম। সরকার এবং দায়িত্বশীল মহল থেকে বারবার আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হতে আগ্রহবোধ করেননি। এটি গণতন্ত্রের জন্য সুখকর বিষয় নয়। নির্বাচন মানে প্রতিযোগিতা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের অন্যতম মাধ্যম। সেখানে জনগণই যদি ভোটকেন্দ্রে না আসে, তাদের মধ্যে যদি এ ধারণা পোক্ত হয়ে যায় যে, যে কোনোভাবেই হোক সরকার সমর্থিত প্রার্থীই জয়ী হবে, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আর দরকার নেই, তাহলে তা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। এর ওপর যদি নির্বাচনী সহিংসতা চলতে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের নির্বাচন থেকে পুরোপুরিই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার শঙ্কা আরো প্রগাঢ় হতে পারে। সেটা হতে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
আমরা চাই, দেশের সব নির্বাচন হোক সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে। নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এর বিকল্প নেই। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন বানচাল বা নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্ট করার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে নতুন করে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ পাবে না বলে মনে করি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ