ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্যনিরাপত্তা

প্রকাশনার সময়: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৩১

বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব ধীরে ধীরে সবার উপলব্ধিতে আসছে। করোনাপরবর্তী সময়ে এ প্রভাব যে আমাদের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য বিরাট হুমকি হতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাপরবর্তী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জনবহুল দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অনেক দেশ নিজস্ব চাহিদা মেটাতে কমিয়ে বা বন্ধ করে দিতে পারে নানা পণ্য রফতানি। ফলে আমদানিনির্ভর দেশ ও এলাকাগুলোতে খাদ্যঘাটতি দেখা যে দেবে না, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে কৃষি।

একসময় পাঁচ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। আজ তিন গুণের বেশি জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনে আমরা সফল হয়েছি। করোনাপরবর্তী সময়গুলোতেও যেন এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে, তাই এখনই সময় কৃষিতে প্রত্যেকের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর। দক্ষিণ এশিয়ায় জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৬০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষকরা বিশ্ব জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি এবং পৃথিবীর কৃষিজমির মাত্র ৫ শতাংশ দিয়ে তাদের কৃষি উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই অঞ্চলের দেশগুলো কোভিড-১৯ অতিমারির আগেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অনুন্নত জনস্বাস্থ্যসহ একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ এখনো মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীন এবং এই অঞ্চলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৬ শতাংশ অপুষ্টির কারণে হতবুদ্ধির শিকার এবং ১৬ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশ্বের হতবুদ্ধি শিশুদের প্রায় ৪০ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ায়।

কোভিড-১৯ এবং জলবাযু পরিবর্তন দুটি বৈশ্বিক সংকট এবং উভয়ই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন এই দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের অনেক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

কোভিড-১৯ কৃষি কার্যক্রম এবং সরবরাহ শৃঙ্খলাকে আরো ব্যাহত করেছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারি আমাদের দেখিয়েছে যে, এই পরস্পর নির্ভর বিশ্বে ‘সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন এবং হিমবাহের ত্বরিত গলন দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন করোনাভাইরাস দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষি কার্যক্রম, পরিবহন এবং বিপণনকে প্রভাবিত করেছে, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যের প্রচলিত চ্যালেঞ্জগুলোকে আরো জটিল করে তুলছে। এটির ধাক্কা থেকে মুক্ত করার জন্য জুতসই পরিকল্পনা প্রয়োজন। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং নেপাল করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কোভিড-১৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল মিথস্ক্রিয়া খাদ্যনিরাপত্তার ছয়টি মাত্রাকে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে, যথা, খাদ্যপ্রাপ্যতা, প্রবেশাধিকার, স্থিতিশীলতা, ব্যবহার, সংস্থা এবং স্থায়িত্ব।

উল্লেখ্য, এইচএলপিই গ্লোবাল ন্যারেটিভ রিপোর্ট সম্প্রতি খাদ্যনিরাপত্তার আরো দুটি মাত্রা যুক্ত করেছে তা হলো : সংস্থা (এজেন্সি) এবং স্থায়িত্ব (সাসটেইন্যাবিলিটি)। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষকরা এখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা পরীক্ষা করে মোকাবিলা করা দরকার। যেমন স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালীকরণ, কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মতো অতিমারি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য খাতের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা দরকার।

জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যব্যবস্থার কার্যকারিতা তৈরি করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যাতে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং খাদ্য উৎপাদন ও পরিবহন নিরাপদে পরিচালনা করা যায়। কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, পানি এবং স্যানিটেশন প্রয়োজন। এবং অতিমারির জন্য কৃষিকে প্রতিরোধী করা।

কোভিড-১৯ অতিমারি আমাদের শিখিয়েছে যে, একটি জরুরি অবস্থা অপ্রত্যাশিতভাবে উদ্ভূত হতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য স্থানীয় এবং আঞ্চলিক খাদ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং স্বল্প সরবরাহ শৃঙ্খল যাতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে সে দিকে লক্ষ রাখা।

উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বেকারদের কর্মসংস্থান প্রদানের জন্য ভুটান সরকার শহুরে এবং পৌর-শহুর এলাকায় কৃষিকে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য পতিত জমি ব্যবহার করতে সরকার বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা জাল বিস্তৃত ও শক্তিশালীকরণ:

দুর্বল সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য সামাজিক সুরক্ষা জাল বিস্তৃত ও শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। যথাসম্ভব পর্যাপ্ত জরুরি খাদ্যসহায়তা প্রদান করা উচিত, এই ধরনের জনসাধারণের বিতরণকে স্থানীয় ও আঞ্চলিক খাবারের সঙ্গে একীভূত করে কাজ করা উচিত। যেখানে সরবরাহ শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, সেখানে শিশু ও মহিলাসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। নমনীয় ও স্মার্ট পন্থা অবলম্বন, স্বাভাবিক খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য স্মার্ট পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি শ্রমের সোর্সিং, শ্রমের গতিশীলতা এবং কাজের সময় বৃদ্ধিতে নমনীয়তা দরকার। যেমন_শিফটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা বা যেখানে সম্ভব সেখানে কাজের সময় পরিবর্তন করা দরকার। উন্নত স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির নিশ্চয়তার জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবারকে নিরুৎসাহিত করা এবং পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যকে উৎসাহিত করা উচিত। যেখানে সম্ভব, স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগকে হতাশ না করে মানব শ্রমিকদের পরিবর্তে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য, হারভেস্টার কিনতে ভর্তুকি প্রদান করেছিল। এটি খাদ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাবে। শহুরে দরিদ্রদের জন্য আরো বৈচিত্র্যময় এবং পুষ্টিকর খাবারের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে হবে যা জীবিকা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি অতিমারির সময় সাপ্লাই চেইন চলমান এবং কার্যকরী রাখা; অতিমারি চলাকালীন খাদ্য ও কৃষি উপকরণগুলোর চলাচল নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ চ্যানেল এবং মানসম্মত কার্যকর পদ্ধতিগুলো চিহ্নিত করে এর বিকাশ ঘটাতে হবে যাতে সরবরাহ শৃঙ্খল চলমান এবং কার্যকরী থাকে। যেমন_শেখ হাসিনার সরকার ধান কাটার সময়কালে কৃষি শ্রমিকদের পরিবহন নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। যা ফসলের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে। স্থানীয় সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং প্ল্যাটফরমকে শক্তিশালী করা উচিত।

সরকারকে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরে উন্নত আঞ্চলিক বাজারের অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা উচিত এবং সংক্ষিপ্ত সরবরাহ শৃঙ্খল এবং আঞ্চলিক বাজারসহ আরো বৈচিত্র্যময় এবং স্থিতিস্থাপক বিতরণ ব্যবস্থাকে সমর্থন করা উচিত। ধাক্কা মোকাবিলার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো আমদানির উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটলে ভঙ্গুরতা কমানোর লক্ষ্যে একক উৎসের ওপর নির্ভর না করা। এছাড়াও অভিযোজন পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেয়া : কৃষি এবং খাদ্যব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে, সুনিপুণ ব্যবস্থাসহ একটি উপযুক্ত অভিযোজন পরিকল্পনা প্রয়োজন, যা পারস্পরিকভাবে শক্তিশালী করে। অভিযোজন ব্যবস্থাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে, জনস্বাস্থ্য এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের পাশাপাশি কৃষকদের জীবিকা এবং অভিযোজিত ক্ষমতা উন্নত করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। উপযুক্ত ফসল ধারা, কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদের টেকসই ব্যবহারসহ ইকোসিস্টেম সংরক্ষণে টেকসই সমাধান গ্রহণ করা দরকার।

তাছাড়া টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান মাত্রা। কৃষিতে রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহার এবং ভূগর্ভস্থ জল এবং শক্তির অস্থিতিশীল ব্যবহার উচ্চ নির্গমন, জলদূষণ, বায়ুদূষণ, পানির অভাব, শক্তির অভাব, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। জিএইচজি নির্গমন কমিয়ে আনার জন্য কৃষিতে টেকসই বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং ট্রেডিংয়ে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা দরকার। এমনকি উৎপাদনশীলতা ও সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা উন্নত করা; উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদনের ব্যবধান কমাতে, সম্পদ সংরক্ষণে ও ব্যবহারে দক্ষতা উন্নত করতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোকে কৃষি এবং খাদ্যব্যবস্থায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা উচিত।

রাসায়নিক সার এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে পরিবেশগত সহ-বেনিফিট উৎপন্ন করার সময় স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত ফসলের ধরন এবং উপযুক্ত কৃষিব্যবস্থা নির্বাচন করা এবং বহু-ফসল পদ্ধতিসহ ভূমি ব্যবহারের দক্ষতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতা উন্নত করা যেতে পারে। এবং দুর্বলতা ম্যানেজ করার জন্য অনুকূল কৃষিনীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সরকারের নীতি, আর্থিক বিনিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার সমন্বয়করণের মাধ্যমে সক্ষম পরিবেশ তৈরি করা উচিত।

কোভিড-১৯-এর সময় সরবরাহ চেইন কার্যকর রাখার জন্য ভ্যালু চেইন অ্যাক্টরদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা উচিত যাতে তারা পর্যাপ্তভাবে ভবিষ্যতে মহামারি এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে সর্বোপরি গবেষণা ও উদ্ভাবন খাদ্যব্যবস্থার দক্ষতা স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করার জন্য উন্নত গবেষণা, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের জন্য সরকারের অর্থায়ন করা উচিত যা পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে, জনস্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে এবং সম্পদ সংরক্ষণ, ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে এবং গ্রিনহাউসে গ্যাস নিঃসারণ কমাতে সাহায্য করে। টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি ব্যবস্থাপনা ও খাদ্যব্যবস্থার উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উপযুক্ত অভিযোজন এবং প্রশমন পদ্ধতিগুলো চিহ্নিত করার জন্য গবেষণার প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দেখা দেয়া অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা এই অঞ্চলজুড়ে পরিবারগুলোর ভীষণরকমের ক্ষতি করছে। প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং পর্যটন খাত থেকে আয় কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে চাকরি হারানো ও আয় কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ইউনিসেফের প্রক্ষেপন অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসে আরো প্রায় ১২ কোটি শিশু দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় নিপতিত হতে পারে, যা তাদের ইতোমধ্যে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ২৪ কোটি শিশুর কাতারে নিয়ে যাবে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর প্রভাব কমাতে সরকারগুলোর উচিত জরুরি সর্বজনীন শিশু সুবিধা ও স্কুল ফিডিং (স্কুলে খাবার দেয়া) কর্মসূচিসহ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলোর দিকে অবিলম্বে আরো বেশি করে সম্পদ বরাদ্দ করা। গফ বলেন, এখন এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট থেকে দ্রুততর সময়ের মধ্যে একটি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই উন্নয়নের মডেলে রূপান্তরিত হতে সহায়তা করবে, যেখানে শিশুদের কল্যাণ, অর্থনীতি এবং সামাজিক সংহতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সুবিধা পাওয়া যাবে। খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে গেলেও খাদ্যনিরাপত্তা এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয় সম্বন্ধে আরো সচেতন হতে হবে। করোনাপরবর্তী জীবনমান ধরে রাখতে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহের চেইন ঠিক রাখা কঠিন হতে পারে। করোনাপরবর্তী বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি কী হতে পারে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। করোনাপরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন ও পুষ্টি নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। কোনো সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের সারা বছর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির শারীরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিদ্যমান থাকলে তবেই সেই সমাজে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে বলা যাবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ