ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কেন? 

প্রকাশনার সময়: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫৩ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৯:৪৮

কোটা বিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে দেশে চলা কয়েকদিনের সহিংসতা ও নাশকতার শিকার হয়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার (২৯ জুলাই ২০২৪) জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৫০, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, এ সংখ্যা ১৮৫ থেকে ২১০, আর আন্দোলনকারীদের দাবি মৃতের সংখ্যা ২৬৬। মৃতের সংখ্যা নিয়ে এই বিভ্রান্তি বিতর্ক ও সমালোচনার ডালপালা মেলছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তালিকা যাচাই বাছাই করে মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে অনুসন্ধান চলছে। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। তবে এ সংখ্যার বিভ্রান্তি যত দ্রুত কাটানো যাবে, ততই সব পক্ষের মঙ্গল হবে।

দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। কিন্তু এবারের এই আন্দোলনের ভয়াবহতা এবং কৌশল এতোটাই ভিন্নরকম ছিল যে, পাল্টা কৌশল গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের সময় নিতে দেখা গেছে। যার ফলে সঙ্কটের উত্তাপ অনেকটাই প্রলম্বিত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সঙ্কট মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। কিন্তু এরই মাঝে যে প্রাণগুলো ঝরে গেলো, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? এই প্রাণহানির ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক গোষ্ঠী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষার্থী কার কতটুকু দায় সেটা নিরূপণ করা এখন প্রধান কাজ। আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সে কমিটি এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ রিপোর্ট দেবে বলে জনগন আশা করে।

বলছিলাম, প্রাণহানির দায়-দায়িত্বের কথা। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের পরিবারকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে রোববার (২৮ জুলাই) এককালীন অনুদান দিয়েছেন নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে। অসহায় পরিবারগুলোর দায়িত্ব গ্রহণে তিনি এগিয়ে আসায় তাকে ধন্যবাদ। কিন্তু এ ঘটনার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের শেষ পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগন চায়, এ ঘটনার উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে এর ইন্ধনদাতা, সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠীসহ ঘাতকদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসুক। অন্ততঃ এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চায় এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি পক্ষ ও ব্যক্তির উদাহরণযোগ্য সাজা চায়।

সেক্ষেত্রে সরকারকে সবচেয়ে বেশী দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারের প্রতি জনগনের আস্থার জায়গাটি নিরংকুশ করতে হলে সরকারের উচিত হবে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে সব ধরণের সহযোগিতা করা। কোনোভাবেই তদন্ত কমিটির ওপর কোনো হস্তক্ষেপ না করা। জনগনের মধ্যে সবসময় এ ধারণা বিদ্যমান যে, সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য অনেকসময় সঠিক তথ্য বা ঘটনা জনগন জানতে পারে না। আবার বিভিন্ন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসমক্ষে না আসার অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এবারের এই নাশকতা ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার অন্ততঃ সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি জনগনকে অবহিত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাদাকে সাদা, কালোকে কালো’ বলার যে সংস্কৃতি চান, এ ঘটনার পূর্বাপর পর্যালোচনা ও সত্য ভাষণের মাধ্যমে তার প্রভাব দেখতে চায় বাংলার আপামর জনগন।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ