গত ২৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ শপথ গ্রহণ শেষে সবাই খোশগল্পে মেতে ছিল। জনৈক বিনোদন সাংবাদিক চিত্রনায়িকা ময়ূরীর অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েকে প্রশ্ন করে; তুমি কি তোমার মায়ের আগের আইটেম গানগুলো দেখ, তা তোমার কাছে কেমন লাগে? পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন খল অভিনেতা শিবা শানু। তিনি বিদ্যুতের গতিতে এসে প্রতিবাদ ও হাতাহাতি করে। এরপরের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়াসহ পুরো দুনিয়ার মানুষ ভিডিওতে দেখেছে। প্রশ্ন হচ্ছে ঘটনাটির সূত্রপাত বা মূল অপরাধী কে? পাঠক এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনারা বলবেন; একজন বিনোদন সাংবাদিক দক্ষ এবং সুস্থ হলে এমন অরুচিকর প্রশ্ন করতে পারে না।
বিনোদন সাংবাদিক বনাম চলচ্চিত্রের কয়েকজন অভিনেতা তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষ বিনোদন সাংবাদিককে দোষী মনে করেছে যা নেট দুনিয়া থেকে জেনেছি। কিছু সচেতন মানুষ এমন মন্তব্যও করেছে যেমন; একজন ব্যক্তি জীবনে বহুবার গরু চুরি করেছে, এলাকায় সালিশ দরবার হয়েছে, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ভালো হয়ে হজ করেছে, কোরবানি ঈদে বিশাল এক গরু কোরবানি দিয়েছে।
মাংস বণ্টনের সময় কোনো একজন হাজি সাহেবের ছেলেকে যদি প্রশ্ন করে, আপনার বাবা তো এক সময় গরু চোর ছিল, আপনার বাবা সম্পর্কে এমন কথা শুনতে কেমন লাগবে! একজন সুস্থ মানুষ সহজে এমন প্রশ্ন করতে পারে না। অতএব শুধু বিনোদন সাংবাদিক নয় সব মানুষেরই কথা বলার সময় চিন্তা করা প্রয়োজন। কোনো এক মনীষী বলেছেন; একজন শিশুর কথার বুলি শিখতে দুই বছর সময় লাগতে পারে আর কোন জায়গায় কোন কথা বলা প্রয়োজন সেটা শিখতে জীবন পার হয়ে যায়।
এ বছর রমজানে মৌসুমি ফল তরমুজ ক্রয় করিনি। এখন যেহেতু রমজান শেষ আজ সকালে স্থানীয় এক দোকানে ছোট সাইজের একটা তরমুজের দাম জিজ্ঞেস করলাম দোকানি বলল, ৩০০ টাকা! আমি তো অবাক। দোকানি বারবার বলল- আপনি কত দেবেন, কিন্তু আমি দাম বলার সাহস পাইনি। বাজার সিন্ডিকেট সব জায়গায়।
এসব সিন্ডিকেট ব্যবসা পরিবর্তনের শুধুমাত্র একটাই উপায় আছে- মানুষকে বিশুদ্ধ মাটির মানুষ হতে হবে, সৃষ্টিকর্তা একজন আছে ২৪ ঘণ্টা মনে রাখতে হবে, সবাইকে চিন্তা চেতনায় মানবতার পরিচয় দিতে হবে, তবেই শান্তি দুই পাড়ে। বেশ কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে খুব তোলপাড় হচ্ছে।
বৃদ্ধাশ্রমের আড়ালে তিনি নাকি কিডনি বিক্রি করেছেন- প্রিন্ট মিডিয়া, ইউটিউবারসহ বহু সাংবাদিক বিষয়টা নিয়ে প্রতিবেদন করছে।
দিন দিন আমাদের সমাজ রসাতলে ডুবে যাচ্ছে বেশ টের পাচ্ছি। যেদিন থেকে দেখেছি লাশ কাটা ঘরে একজন ডোম অপমৃত্যুর নারী বা তরুণীদের ধর্ষণ করে। তখন থেকে নিজে নিজে বুঝে গেছি মানুষ কি আর মানুষ আছে- সব দেখি ভেজালে সয়লাব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সুমন। তার বেশ কিছু ভিডিও দেখলাম। তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা শুনে অবাক হয়েছি!
একজন এমপি বা মন্ত্রী কেন এত তাড়াতাড়ি বা রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান এবং একজন এমপি কত টাকা বেতন পান যে তার নির্বাচিত এলাকায় ভালো কাজ করেছেন, সেটা ৩০০ আসনের জনগণ দেখেছেন, কিন্তু তার এমন জ্বালাময়ী বক্তব্য দেশের কিছু মানুষ পছন্দ করেছে, ব্যারিস্টার সুমনের মতো এমন দেশপ্রেমিক বা এমপি বা মন্ত্রী হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি একদিন ঠিক-ই বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হবে বাংলাদেশ।
একজন মানুষের কত চাহিদা যে এত আকাশছোঁয়া অট্টালিকা দিয়ে কী হবে? লোক দেখানোর জন্য প্রতি বছর হজ পালন করছেন, মানুষের হক মেরে নিজের অন্তরকে কলুষিত করে হজে গিয়ে শয়তানকে ঢিল ছুঁড়ছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আপনি যে ধর্মের লোক হোন না কেন আগে মানুষ হওয়াটা জরুরি। রাষ্ট্রের এমন কোনো দপ্তর আছে যেখানে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে না? এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি ঘুস দিয়ে চাকরি নিয়েছেন, টাকাটা ওঠানোর জন্য সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টুঁটি চেপে ধরে টাকা আদায় করছেন, একদিন আপনি পরপারে পাড়ি দেবেন।
প্রাবন্ধিক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তৈল প্রবন্ধে বলেছেন; যে সর্ব শক্তিময় তৈল ব্যবহার করিতে জানে, সে সর্বশক্তিমান। তাহার কাছে জগতের সকল কাজই সোজা। তাহার চাকরির জন্য ভাবতে হয় না। যে তৈল দিতে পারিবে, তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসর হইতে পারে, আহাম্মক হইলেও ম্যাজিস্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে।
ট্রাফিক পুলিশ যে পরিমাণ কষ্ট করে প্রতিদিন- তা দেখে মাঝে মাঝে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। কিন্তু কিছু পুলিশ ও সার্জেন্টের আচার-আচরণ খুব জঘন্য, মুখের ভাষা লেখার মতো না। আপনার গাড়ির কাগজপত্র ড্রাইভিং লাইসেন্স সব ঠিক আছে তারপরও আপনাকে মামলা খেতে হবে। বহু আগে একটা কথা শুনেছিলাম- ‘আকাশের যত তারা, ট্রাফিক পুলিশের আইনের তত ধারা’।
কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও মামলা দেবে কেন, প্রতিবাদ কেউ করে না। কিছু পিকআপ ড্রাইভার মামলা যাতে না হয় ৫০০/৭০০ টাকা দিয়ে থাকে, ২০ থেকে শুরু করে মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হয়। আমি এ ঢাকা শহরে প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করি।
অসংখ্যবার পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছি, কিছু পুলিশ সদস্য আছে তুই ছাড়া কথাই বলে না, কিন্তু আমি কখনো বলিনি আমি লেখালেখি করি। বাংলাদেশের প্রায় সব পেপারে নিয়মিত লিখি। কি! পাঠক ভাবছেন সহজে পার পেয়ে যাব! না হয়রানি আমাকে করবেই। তাহলে কি সৎ পুলিশ বাংলাদেশে নেই? অবশ্যই আছে কিন্তু সংখ্যায় খুব বেশি নয়, অন্তত আমার কপালে জুটেনি।
পাঠক বাংলাদেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব, হেফজ খানা ও ইউনিভার্সিটি সহ ধর্ষণ হতে কেউ মুক্তি পাচ্ছে না, সব সংবাদ তো মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় না, অনেক ভুক্তভোগী পরিবার মান-সম্মানের ভয়ে মামলা করতে চায় না।
বাংলাদেশে কত হাজার মাজার আছে তার সঠিক হিসাব আমার জানা নেই। মাজারগুলোতে কবর জিয়ারত বা দোয়া করা যেতে পারে। কিন্তু বছরের পর বছর ভণ্ডরা মাজারগুলোকে গাঁজার আসরে পরিণত করেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখুন কথাটা মিথ্যা বলেছি কি না, সাধারণ বোকা মানুষগুলো টাকা দান করে, যা ভণ্ড নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে জীবন পার করছে, যা ইসলামের ধর্মীয়গ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কখনো সমর্থন করে না এবং অন্য ধর্মগ্রন্থেও সমর্থন করে না। মানুষ দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে, বিপদগামী হচ্ছে চিন্তায় চেতনায় আজ সমাজ অসুস্থ। মানুষ যে পর্যন্ত বিশুদ্ধ মাটির মানুষ হতে না পারবে ভূখণ্ডের মালিক আমাদের স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে না।
বাংলাদেশে বর্তমানে বৈরী আবহাওয়া অসহনীয় পর্যায়ে। তাপমাত্রা ৪০/৪১/৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। মানুষের আমূল পরিবর্তন করতে হবে, আমার মনে হয় তবেই বাংলাদেশে শান্তি বর্ষিত হবে।
বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে, বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে, মৌসুমি জলবায়ু এবং পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বৃক্ষনিধন আইনও মানতে হবে। বৃক্ষনিধন করে দেয়ালে গাছের ছবি এঁকে শুধু স্ল্লোগান দিলে চলবে না, বাস্তবে গাছ লাগাতে হবে। সব শেষে আবারও এটাই বলব মানুষ যে পর্যন্ত বিশুদ্ধ মাটির মানুষ হতে না পারবে ভূখণ্ডের মালিক আমাদের স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে না।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
নয়াশতাব্দী/ডিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ