ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ: বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট

প্রকাশনার সময়: ০৬ মে ২০২৪, ০৮:২৫

রাশিয়ার বিশেষ অভিযানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে দীঘর্মেয়াদি যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, শুরু হওয়া এ অভিযান জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২৬ মাস পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে মস্কো, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা আমেরিকা ও তাদের মিত্ররা ইউক্রেনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শেষ অস্ত্রটুকু ধরার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ড্রোন, তুরস্কের Bayraktar TB2 এর বিপরীতে ইরানের Shahed-129, Shahed-191 দিয়ে চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ।

সব জায়গাতে কর্তৃত্ব বিস্তারে পুতিন ওয়াগনারে বাহিনীকে ব্যবহার করলে এ যুদ্ধে প্রথমে কিছুটা সফলতা পেলেও আশানুরূপ ফলাফল পায়নি। অভিযানে বছর দেড়েক পার করে ফেললেও কিয়েভকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল মস্কো। তবে মোড় ঘুরে যায় ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ইসরায়েলকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হওয়া সংকটে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মস্কো। রাশিয়ার ভূখণ্ডের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে দিন দিন। ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণ, ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার চেষ্টার মাধ্যমে ক্রমেই রাশিয়ার সীমান্তের দিকে যুদ্ধ সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছে ইউক্রেনে।

অন্যদিকে রাশিয়া এখনো শহরগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। যুদ্ধের প্রভাবে গোটা ইউরোপজুড়ে অর্থনীতি ব্যাপক চাপে পড়েছে। দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির চড়া হার, গত আগস্টে তা পৌঁছেছিল পাঁচ দশমিক ৩ শতাংশে। জার্মানি ও ফান্স দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। যুদ্ধের বছরে টালমাটাল হয়ে পড়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার।

একদিকে রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে, অন্যদিকে সৌদি তেল উত্তোলন হ্রাস করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বিশ্ব বাজারে। আফগান যুদ্ধে দুই দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির বিশাল আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতে চীনের সঙ্গে অর্থনেতিক দ্বন্দ্বে টালমাটাল আমেরিকার পক্ষে ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অস্ত্র সহায়তা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো, সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে টিকিয়ে রাখার সব সহায়তা- সত্যিই এক দুর্বোধ্য অবস্থায় পড়েছে ওয়াশিংটন। এখন এমন চরম অচলাবস্থার মধ্যে আটকে আছে, যা কেবল তাদের জন্য নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যই এক মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। একের পর এক ব্যাংক দেউলিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে আমেরিকার অর্থনীতির মৃত্যুযাত্রা। ইউরোপের অন্যান্য দেশ ইউক্রেনকে সহায়তা পাঠানোর পরিবর্তে ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাঠাচ্ছে।

ডলারের দাম কমা-বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠছে নামছে অন্য সব দেশের মুদ্রার মানও, শেয়ার বাজারে নামছে ধস। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ডলারের বিপরীতে অন্য কোনো মুদ্রা আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রূপ দেয়ার। ২০২৪ সালে তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। কমছে রির্জাভের পরিমাণ সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির গ্রাফ আরও ওপরে উঠছে। এরপর খুব দ্রুতই অর্থনীতির নানা খাতে সংকট দেখা দিতে থাকে। জ্বালানি তেলের দাম যুদ্ধের প্রভাবে ক্রমেই বাড়ছে।

অন্যদিকে সমাধান হয়ে যাচ্ছে কঠিন আমেরিকা ও ইউরোপ এত অর্থ খরচ করেও যু্দ্ধ থেকে পিছিয়ে যেতে চাইবে না বরং প্রয়োজনে ন্যাটো প্রস্তুত সর্বশক্তি নিয়ে, বিপরীতে রাশিয়া তাদের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও এবং এত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এ যু্দ্ধ থেকে পিছিয়ে আসতে চাইবে না কখনোই। অনেক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন ইউক্রেন জয়ের পর বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে আক্রমণ করতে পারেন পুতিন। সুতরাং ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলেও বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট কাটছে না। এদিকে, আমেরিকা অর্থনৈতিক সংকটে থাকার পরেও নতুন করে ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন, ইসরায়েলের জন্য ২৬ বিলিয়ন অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছে । যুদ্ধ এ গতিতে অব্যাহত থাকলে সামনে এক ভয়াবহ পৃথিবী অপেক্ষা করছে সবার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ