এবারের বইমেলায় একদিন আড্ডা দিলাম প্রখ্যাত সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় হরিশংকর জলদাসের সঙ্গে। আড্ডার শুরুতে হরিশংকর বললেন, ‘মানুষ সুখ কিনতে পারে না আর দু:খ বেঁচতে পারে না’। এটা করতে পারলে পৃথিবী হয়ে যেতো ভারসাম্যহীন।
এই লেখকের সঙ্গে আড্ডার শেষভাগে আমরা চা খেলাম। দুধ চা। তাঁর কথা হলো- চা-ই যেহেতু খাবো, তাহলে দুধ-চিনি দিয়েই খাবো। তাঁর এ কথা দুটি আমার খুবই পছন্দ হয়। তিনি আরও বললেন, সুখ মানুষকে যতটা প্রশান্তি দেয়, দু:খ তার চেয়েও বেশি তাড়িত করে।
হরিশংকরের বাবা ছিলেন একজন জেলে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। তাঁর সম্পর্কে আরেক দিন লিখবো। আজ বলছি- বিশ্ব সুখ দিবসের কথা। পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন ৮০২ কোটির মতো। এতে কতজন সুখী, আর কতজন অসুখী- এই ডাটা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
আবার সুখেরও তেমন কোনো স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সুখ হলো মনের ও দেহের সংমিশ্রিত একটা ব্যাপার। যা অনুভব করা যায়। বাহ্যিকভাবে সুখ সরাসরি দেখা যায় না। তবে দু:খ ও সুখের অনুসঙ্গ দেখা যায়। আবার কখনও কখনও সুখ ও দু:খের স্বরূপ দেখা যায়।
এই ধরুন, নিকট আত্মীয় মারা গেলে বা কেউ অসুস্থ থাকলে মন খারাপ থাকে। কেউ কেউ কান্নাও করে। এগুলো দু:খবোধ বা কষ্ট। আবার কেউ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে কিংবা নতুন বিয়ে করলে প্রফুল্ল থাকে, মধুচন্দ্রিমা করে- এগুলো সুখের বাহ্যিক রূপ। তবে সুখ ও দু:খের প্রকৃত রূপ থাকে মনের ভেতরে। ফলে সেটা দেখা যায় না। অনুভব করতে হয়।
পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ যতো আবিস্কার করেছে, তার প্রায় সবই করেছে তার নিজের বা মানব জাতির জন্য সুখ, সুবিধার জন্য। তবে দু:খ বা কষ্টের জন্যও অনেক কিছু করেছে। এই যেমন অ্যাটম বোমা আবিষ্কার করা হয়েছে, এক পক্ষের সুখ আর অপর পক্ষকে শাস্তি দিতে। পৃথিবীর সমস্ত বিষয়াদিরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ ভালো-মন্দ, সুখ-দু:খ ইত্যাদি।
বিশ্ব সুখ দিবস আজ। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২০ মার্চ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসটি বিষয়ক জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়- মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য সুখে থাকা। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য দিবসটি পালন করা হবে।
অথচ গোটা পৃথিবীই একটা অসমতায় ভরা। সুষম বণ্টন ও সুষম উন্নয়ন- এ দুটি কথা মানলে পৃথিবীর অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। মানুষ হবে সুখী, সমৃদ্ধশালী।
সুখ ও দু:খকে কেন্দ্র পৃথিবীতে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, সিনেমা, নাটক ইত্যাদি। মানুষ যা কিছুই করে নিজের ও নিজ পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির জন্যই করে। এমনকি একে অপরকে খুনও করে নিজের সুখ বা সুবিধার জন্য।
দিবসটির প্রতিষ্ঠাতা অর্থনীতিবিদ জেম এলিয়েন। তিনি জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও জাতিসংঘের পরামর্শদাতা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা অর্থনীতিবিদদের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘ অনুমোদিত এনজিও ইসিওএসসি বিশেষ পরামর্শদাতার দায়িত্ব পালন করেন।
কথায় বলে, টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। তবে টাকা ছাড়া সুখও আসে না। সুখী হতে হলে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন আছে। আমার অভিমত হলো অর্থকড়ি সংকটের জীবন কখনোই সুখী হতে পারে না। অর্থাৎ অবশ্যই অর্থের দরকার আছে, যতটা আপনার প্রয়োজন। আবার প্রয়োজনের একটা সমী-অসীমাও আছে। এই প্রয়োজনটা ব্যক্তি ও স্থানভেদে কমবেশি হতে পারে। হয়ও সেটা।
মান্না দে গেয়েছেন, ‘সবাই তো সুখী হতে চায়, তবু কেউ হয় কেউ হয় না’। আরেক শিল্পী গেয়েছেন, ‘এ সুখের নেই কোনো সীমানা’। কেউ কেউ বলেন, এই সীমানাহীন সুখের খোঁজে যারা ছুটে বেড়ান, তারাই সবচেয়ে অসুখী এই দুনিয়াতে।
অর্থাৎ চাহিদা কমাতে হবে। যার চাহিদা যতো কম, তার সুখ ততো বেশি। আমি অবশ্য ভিন্নটা বলি- চাহিদা থাকতে হবে। চাহিদা ছাড়া জীবন চলবে না। সুখও আসবে না। সুখকে ধরতে হলে চাহিদাকেই আগে ধরতে হবে।
এদিকে সুখী দেশের তালিকায় নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি মিয়ানমারের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। একরকম যুদ্ধবিধ্বস্ত বা নিম্ন অর্থনীতির দেশের চেয়েও নিচে পড়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১৪৩ দেশের মধ্যে ১২৯তম অবস্থানে আমার দেশ।
এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দুপক্ষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও সুখী দেশের তালিকায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের অবস্থান যথাক্রমে ৭২ ও ১০৫। অন্যদিকে ইসরায়েল ৫ম অবস্থানে থাকলেও, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন আছে ১০৩তম অবস্থানে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ