পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে, ঘুমাতে পারেন না। ঘুমানোর জন্য হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ওষুধ খেয়ে নানা আয়োজন করেও ঘুমাতে পারেন না। আবার একটা দল আছে, যারা যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো জায়গাতেই ঘুমাতে পারেন।
এই যেমন আমি, অফিসের চেয়ারে ঘুমাই। গাড়িতে, বাসে এমনকি রিকশাতেও ঘুমাই। শ্রমিক বা রিকশাচালকরা তো ইট মাথায় দিয়েও বেঘোরে ঘুমান।
একটা কৌতুক বলি; প্রথম বন্ধু দ্বিতীয় বন্ধুকে বলছে, বাশার ভাই অফিসে তো কোনো পরিবেশই নাই। দ্বিতীয় জন (বাশার) বললেন, কিসের পরিবেশ? প্রথমজন বললেন, আরে ভাই ঘুমের কোনো পরিবেশ নাই। একটু যে শান্তি মতো ঘুমাবো, তা আর হয় না! বাসায় ঘুমাতে দেয় না বউ, আর অফিসে ঘুমাতে দেয় না বস! অফিসটাতে সব সময় খালি হৈচৈ। ফলে ঘুমের পরিবেশ কোথাও নাই।
আসলে, সবচেয়ে বড় ঘুম হলো জেগে জেগে ঘুমানো। যেমন- বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাটা জেগে থাকলেও প্রকৃত অর্থে ঘুমিয়েই আছে। চোখের সামনে হাজারটা অন্যায় হলেও প্রতিবাদ না করা তো ঘুমিয়ে থাকার মতোই। ঠিক তাই-ই হচ্ছে এখন।
আমরা রাতের ভোটেও ঘুমাই; দিনের ভোটেও ঘুমাই। ব্যাংক ডাকাতি হলেও ঘুমাই; চুরি, ছিনতাই হত্যা, খুন হলেও ঘুমাই। ঘুমই একমাত্র আমাদের কাজ।
এই যে ২৯টা পণ্যের দাম সরকার মহাশয় ঠিক করে দিলো, কোনোটা কি নির্দিষ্টা দামে বিক্রি হতে দেখেছেন? নিশ্চয়ই না! দেখেন না ভালো কথা; প্রতিবাদও তো করেন না! চুপচাপ কিনে চলে যান সামর্থ অনুযায়ী। গিয়েই আবার ঘুম! হাজারটা অন্যায়-অনাচার তারমধ্যেও ঘুম! কখনও কখনও নিজের কবজি চলে গেলেও ঘুম। কেননা আমার কবজিই তো গেছে, মাথা তো আর যায়নি! ঘাড়ও যায়নি। ফলে ঘুমই ভালো। মাথা-ঘাড় গেলেই বা কি; তাতে আরো বড় ঘুম। কেননা দায়িত্ব শেষ! একেবারেই চিরঘুম!
ঘুম মানুষের তথা যে কোনো প্রাণীরই জন্য বেঁচে থাকার অন্যতম অনুসঙ্গ। মানুষের শরীরে শক্তি সঞ্চার করে ঘুম। মস্তিষ্ককে স্বস্তি ও বিশ্রাম দেয় ঘুম। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হয়। আমাদের এখন গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর। তাতে দেখা যায়, দৈনিক ৭ ঘণ্টা ঘুমালে সারাজীবনের অন্তত ১১ বছর আমরা ঘুমিয়েই কাটাই।
পৃথিবীতে একটি প্রাণী রয়েছে- ব্যাঙ। এই প্রাণীটি শীতনিদ্রায় গেলে টানা তিন থেকে ছয় মাস ঘুমিয়েই থাকে। কোনো কোনো অর্থে এই ব্যাঙও আমাদের চেয়ে উত্তম; কারণ তারা ছয় মাস ঘুমায়, বাকি ছয় মাস কাজকর্ম করে। অথচ মানুষ হয়েও আমরা হাজারো অন্যায়কে প্রশয় দিয়ে সারাজীবনই ঘুমিয়ে থাকি।
যাইহোক, ঘুমের রাজ্যে পৃথিবীকে খুবই সুখময় মনে হয়। ঘুম ছাড়া প্রাণী বাঁচে না। গত ১৫ মার্চ (শুক্রবার) ছিল বিশ্ব ঘুম দিবস। উইকিপিডিয়া বলছে, সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ২০০৮ সাল থেকে World Association of Sleep Medicine বিশ্ব নিদ্রা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি বছর মার্চ মাসে মহাবিষুবের আগের শুক্রবার এ দিনটি পালন করা হয়। এ দিনটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে- সুস্থতার জন্য সুনিদ্রার প্রয়োজনীয়তা এবং নিদ্রাহীনতা ও এর চিকিৎসা, নিবারণ, শিক্ষা জনসমক্ষে তুলে ধরা।
ঘুম মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশকীয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিমিত ঘুম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিদ্রাহীনতার ফলে স্বাস্থ্যহানীর হুমকিতে আছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫% মানুষ! পৃথিবীর জনসংখ্যা বর্তমানে ৮০০ কোটি হলে অন্তত ৩২০ কোটি মানুষ নিদ্রাহীনতায় ভুগছে। যা খুবই উদ্বেগজনক!
এখানে বলা ভালো, কারও নিদ্রাহীনতা যুদ্ধ নিয়ে। কারো আবার শান্তি নিয়ে। কারো নিদ্রাহীনতা অর্থের অভাবে, আবার কারো কারো অতিরিক্ত অর্থই ঘুমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কারো কারো প্রেমের বিরহে। কারো আবার অতিরিক্ত উল্লাসে। কারো চুরির নেশায়। কারো সমস্যা খুনের নেশায়। কারো আবার ঘুমের সমস্যা অন্যের ভালো ঘুমের হিংসায়।
নিদ্রাহীনতার ফলে আবার বিভিন্ন দেশের আর্থিক ক্ষতিও অনুমান করা হয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর নিদ্রাহীনতার কারণে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়, জাপানে ক্ষতি হয় ১৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যে ৫০ বিলিয়ন ও কানাডায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হলে মানুষকে ঘুমের সুযোগ দিতে হবে। দিতে হবে ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ।
নয়াশতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ