ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বাস্তবায়ন জরুরি

প্রকাশনার সময়: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৮:০২

ভোক্তা হচ্ছেন এমন কোনো ব্যক্তি যিনি পুনঃবিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো পণ্য ক্রয় করেন, আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোনো পণ্য ক্রয় করেন, প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তির ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো পণ্য ক্রয় করেন, ক্রেতার সম্মতিতে ক্রীত পণ্য ব্যবহার করেন, পণ্য ক্রয় করে তা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বীয় জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেন, মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে কোনো সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন, আংশিক পরিশোধিত ও আংশিক প্রতিশ্রুত মূল্যের বিনিময়ে কোনো সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন, প্রলম্বিত মেয়াদ বা কিস্তি ব্যবস্থায় মূল্য পরিশোধের বিনিময়ে কোনো সেবা ভাড়া বা অন্যভাবে গ্রহণ করেন এবং যিনি সেবা গ্রহণকারীর সম্মতিতে কোনো সেবার সুবিধা ভোগ করেন।

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস প্রতিবছর ১৫ মার্চ বৈশ্বিকভাবে উদযাপিত হয়। বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও ভোক্তাদের অধিকার বিষয়ে আন্দোলনে সোচ্চার কর্মী মালয়েশিয়ার আনোয়ার ফজল এ দিবস পালনের রূপকার হিসেবে পরিচিতি। ১৯৮৩ সালের ১৫ মার্চ, তিনি ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার উদ্দেশ্যে বৈশ্বিকভাবে দিবসটি উদযাপনের আহ্বান জানান।

নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার- ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন, যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় চারটি মৌলিক অধিকারকে আরও বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরও আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এসব অধিকারকে সনদে অন্তর্ভুক্ত করে।

ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে— (ক) কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রয় করা বা করতে প্রস্তাব করা, (খ) জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় করা বা করতে প্রস্তাব করা, (গ) মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্যপণ্যের সঙ্গে যার মিশ্রণ কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত কোনো পণ্য বিক্রয় করা বা করতে প্রস্তাব করা, (ঘ) কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা, (ঙ) প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা, (চ) কোনো পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা, (ছ) কোনো পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কার্যে ব্যবহূত বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হওয়া, (জ) কোনো পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত পরিমাপ অপেক্ষা কম পরিমাপের পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা, (ঝ) কোনো পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যে ব্যবহূত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছু প্রকৃত দৈর্ঘ্য অপেক্ষা অধিক দৈর্ঘ্য প্রদর্শনকারী হওয়া, (ঞ) কোনো নকল পণ্য বা ওষুধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা, (ট) মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় করা বা করতে প্রস্তাব করা এবং সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করা, যা কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে বিধান করার লক্ষ্যে আইন প্রণীত হয়েছে। কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধি দ্বারা কোনো পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা লটকে প্রদর্শন না করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ না করলে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে উক্ত তালিকা লটকে প্রদর্শন না করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদ্ল বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় করলে বা করতে প্রস্তাব করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্য পণ্যের সঙ্গে যার মিশ্রণ কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি উক্তরূপ দ্রব্য কোনো খাদ্য পণ্যের সঙ্গে মিশ্রিত করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোনো প্রক্রিয়ায়, যা কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমন কোনো পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করলে তিনি অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য সরবরাহ বা বিক্রয়ের সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম ওজনে উক্ত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তির দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওজন পরিমাপের কার্যে ব্যবহূত বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজন অপেক্ষা অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্যের নকল প্রস্তুত বা উৎপাদন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় করলে বা করতে প্রস্তাব করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি, কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত বিধিনিষেধ অমান্য করে সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে, তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি, কোনো ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীকে হয়রানি বা জনসমক্ষে হেয় করা বা তার ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করলে, উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে উল্লেখিত কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড রয়েছে তার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া আদালত যথাযথ মনে করলে, অপরাধের সংশ্লিষ্ট অবৈধ পণ্য বা পণ্য প্রস্তুতের উপাদান, সামগ্রী, ইত্যাদি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ করতে পারবেন।

লেখক: কলাম লেখক, কর্মকর্তা, ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ