ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

প্রতিদিন হোক নারীর

প্রকাশনার সময়: ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৭

আন্তর্জাতিকভাবে নারীর জন্য একটি দিন রয়েছে এটি ভাবতে ভালো লাগলেও এ দিবস নির্ধারণ দিয়েই প্রমাণিত হয় বিশ্বজুড়ে নারী একটি আলাদা সত্তা। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে নারীকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ এমন কোনো একটি খাত নেই যেখানে নারীর অবদান নেই। নারী সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে তার পরিবারে।

হোক সে পরিবার বাবার, শ্বশুরের বা নিজের। আবার এ তিনটি পরিবারেই নারীর অবমূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি হয়। নারী যে মানুষ তারও প্রখর অনুভূতি থাকতে পারে, নিজস্ব মত থাকতে পারে, সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকতে পারে- এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়। দিন বদলেছে, নারীর মতো প্রাধান্য বেড়েছে, নারী এখন অনেক বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারছে আবার তা বাস্তবায়নও করতে পারছে।

কিন্তু এতে তার অস্তিত্ব নড়ে যাচ্ছে বা যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যে কারণে আজ বিশ্বজুড়ে মানবিক বন্ধনগুলো আলগা হয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে ডিভোর্স বাড়ছে, সম্পর্কের গভীরতা কমছে, একের প্রতি অন্যের দায়বদ্ধতার জায়গায় বিশাল ফাঁপা অংশ তৈরি হচ্ছে।

মূলত আন্তর্জাতিক নারী দিবস হচ্ছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের ঐতিহাসিক একটি দিন। বিশ্বের একেক প্রান্তে দিবসটিকে উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য একেক রকম হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও নারীদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।

তবে প্রতিটি দিনই নারীর। কারণ নারীর আন্তরিকতা, মমতা, দায়িত্বশীলতা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে গতিশীল রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। খুব বেশি দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা ১৫ বছর একজন নারী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য তিনি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন।

অতীতের সব সরকার বা সরকার প্রধানের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে সর্বতোভাবে পার্থক্যটা নজরে পড়ে। কারণ তিনি একটি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যেমন দেশকে দেখেছেন, একইভাবে নারীর যে একটি আলাদা সত্তা রয়েছে, মা, ভগ্নি- সেই মমতার জায়গা থেকেও তিনি দেশকে আগলে রেখে এগিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের এমন কোনো একটি খাত নেই যেখানে নারী তার ভূমিকা রাখছে না। একসময় কর্মজীবী নারীকে বিয়ের পাত্রী হিসেবে মেনে নিতে চাইত না সমাজ। এখন পাত্রপক্ষই কর্মজীবী নারী খোঁজেন। কারণ বর্তমান বাস্তবতায় দৈনন্দিন সাংসারিক জীবনযাপনে দুজনের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া এককভাবে টেনে নেয়া খুব কঠিন। ইতিহাস বলে- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা।

সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

মূলত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নারী যতই অর্থনৈতিক বা অবস্থানগতভাবে স্বাবলম্বী হোক না কেন- মানুষ হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা না হলে, সম্মান দেয়া না হলে নারী-পুরুষে ব্যবধান বাড়তেই থাকবে যা কারও কাম্য নয়।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ