ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

যত্রতত্র মাদরাসা এবং স্কুলে পড়ালেখার মান

প্রকাশনার সময়: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৫:০৬

যত্রতত্র মাদরাসা করার আমি ঘোর বিরোধী। বিশেষ করে যাদের মাদরাসা পরিচালনা করার সামর্থ্য নেই, তাদের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা অনুচিত।

বর্তমানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা কিছু মানুষের কাছে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এরা নিজ উদ্যোগে অথবা সমাজের বিত্তশালী কোনো মানুষকে পূণ্যের লোভ দেখিয়ে বা অন্য যেকোনোভাবে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার পর, শিক্ষক ও ছাত্রদের অনেকটা ভিক্ষুকের মতো বাড়ি বাড়ি পাঠায় পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের চাঁদা তোলার জন্য। আর মাদরাসার মালিক বা সিনিয়র শিক্ষকগণ ঘন ঘন বিদেশ সফরে যান প্রবাসী, বিদেশি মুসলিম ব্যক্তি ও সংস্থার দান সংগ্রহের জন্য।

এভাবে সংগৃহীত অর্থ থেকে কমিশন বাদেও তাদের বিমান ভাড়া, হোটেল খরচ ও সামগ্রিক যাতায়াত ব্যয় নির্বাহ করা হয়। প্রশ্ন হলো- আপনার যদি মাদরাসা পরিচালনা করার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে আপনাকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে কেন?

এই যে মাদরাসা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে দান সংগ্রহ করা হয়, শুরুতেই তার কমবেশি ৫০% টাকা কমিশন আকারে মাদরাসা মালিক ও পরিচালনাকারীরা কেটে রাখেন। যেহেতু মাদরাসা পরিচালনা ব্যয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নেই, সে কারণে বাকি ৫০% টাকা থেকেও এই মাদরাসা মালিক ও পরিচালকেরা যাচ্ছেতাইভাবে বিল করে টাকা তছরুপ করে থাকেন।

এ কারণে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা এখন এক শ্রেণির আলেমদের কাছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আর এই আর্থিক দুর্নীতি ও স্খলনের কারণেই আমাদের দেশের আলেম সমাজের নৈতিক মানের চরম অবনতি ঘটেছে। ফলে প্রতিবাদী মানসিক শক্তি হারিয়ে তারা একটি সুবিধাবাদী ও আপোষকামী মনোভাবের মধ্য দিয়ে জীবন নির্বাহ করছে।

তবে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমি প্রবলভাবে দ্বিমত পোষণ করি। উন্নত বিশ্বে যেমন যত্রতত্র মার্কেট বা শপিং সেন্টার খোলা না গেলেও, বাংলাদেশের যেখানে সেখানে মার্কেট, শপিং সেন্টার বা দোকান করা যায়। লোকজন সেটা করছেও। কিন্তু দোকান করলেই কিন্তু সব দোকানে ক্রেতারা যায় না। ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু মানদণ্ড বিবেচনায় দোকান নির্বাচন করে থাকেন।

ঠিক তেমনি যত্রতত্র মাদরাসা, স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন খুললেই একজন অভিভাবক সেখানে তার সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠান না। একজন অভিভাবক তার সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মানদণ্ড বিবেচনা করেন এবং সেই বিবেচনার ভিত্তিতেই সন্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি স্কুল, কিন্ডার গার্টেন নাকি মাদরাসা হবে- তা নির্বাচন করেন।

সন্দেহ নেই পণ্য ক্রয়ের চেয়ে সন্তানের শিক্ষা দান একজন মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সিরিয়াস বিষয়।

আমার মতে, যত্রতত্র মাদরাসা খোলার কারণে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমেনি, বরং কমেছে স্কুলে পড়াশোনার মান পড়ে যাওয়ার কারণে। প্রতি বছর পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন এবং পাঠদান নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাধারণ অভিভাবকদের মাঝে স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের প্রাইমারি পর্যায়ে সরকারি স্কুলের পরিবর্তে কিন্ডার গার্টেন ও মাদরাসাতে পাঠানো শ্রেয়তর মনে করেন।

মাদরাসার মতো যত্রতত্র এই দেশে কিন্ডার গার্টেনও গড়ে উঠছে। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় কিন্ডার গার্টেনের কথা বলেননি। এছাড়াও অনেক মাদরাসাতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্কুলিং ব্যবস্থা আছে। ফলে অনেক কর্মজীবী পিতা-মাতা তার সন্তানকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে মাদরাসায় দিয়ে যান এবং ফেরার সময় মাদরাসা থেকে বাসায় নিয়ে আসেন।

মূলত তারা মাদরাসাকে পড়াশোনার পাশাপাশি ডে-কেয়ার সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করেন। ধর্মীয় শিক্ষাটা বোনাস হিসেবে পাওয়া যায়।

এছাড়াও বর্তমান যুগ-জামানা ও সামাজিক নানা বিচ্যুতি বিবেচনায় অনেক অভিভাবক তার সন্তানের মধ্যে শিশুকালেই ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে প্রাইমারি পর্যায়ে সন্তানকে মাদরাসাতে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে আমার অভিমত।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ