ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অভিস্রুতি শাস্ত্রী নাকি বৃষ্টি খাতুন, সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের

প্রকাশনার সময়: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৫
ছবি- বৃষ্টি খাতুন ওরফে অভিস্রুতি শাস্ত্রীর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

অভিস্রুতি শাস্ত্রী নাকি বৃষ্টি খাতুন- এই বিতর্ক এখন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে। ফয়সালা দেবে ডিএনএ ল্যাব, এমনটাই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, একজন মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যে কোনো ধর্ম গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে। এটি অপরাধ নয়, বাংলাদেশি আইনের দৃষ্টিতে। সেই হিসেবে বৃষ্টি খাতুনও ধর্মান্তরিত হয়ে অভিস্রুতি শাস্ত্রী হতেই পারেন। কিন্তু বৃষ্টি খাতুন ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন- এমন কোনো নজির কোথাও কেউ উপস্থাপন করে নাই।

আমার প্রশ্ন- তাহলে, বৃষ্টি খাতুন কেনো অভিস্রুতি শাস্ত্রীর নাম গ্রহণ করলেন? কেনো নিয়মিত মন্দিরে পূজা দিতে যেতেন? কেনো নিজের বাড়ি ভারতে দাবি করতেন? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা ও চরিত্র বুঝতে এই প্রশ্নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!

সম্পূরক প্রশ্ন আসতে পারে, একটি মুসলিম মেয়ে কেনো নির্ভেজাল হিন্দু নাম ও পদবী গ্রহণ করবেন? কেনো তিনি নিয়মিত পূজা অর্চনা করতেন? এটি কি কোনো সাংস্কৃতিক সঙ্কট অথবা বিচ্যুতি; বলিউডি খানদের মতো? পূজা অর্চনা করতে বলিউডি খানদের তো নাম পরিবর্তন করতে হয়নি। তাহলে, কেনো তিনি মায়ের নাম বদলে বলতেন?

আরো প্রশ্ন উঠতে পারে, অভিস্রুতি শাস্ত্রী কি কোনো বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতেন? কোনো বিশেষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নাম পরিবর্তন ও মন্দিরে যাতায়াত করতেন? কী হতে পারে সেই লক্ষ্য?

এসব প্রশ্নের সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান হতে পারে- অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুন ধর্মান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। যেটাকে বলা যেতে পারে, বিশ্বাসের পরিবর্তন প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে কাউন্টার প্রশ্ন আসবে, সেক্ষেত্রে তো তাকে নাগরিকত্ব অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দেওয়ার কোনো জরুরত ছিল না?

তবে কী এই নাম পরিবর্তন ও মন্দিরে যাতায়াত, পূজা অর্চনা, ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দান— এসবই রাষ্ট্রে তাকে বিশেষ কোনো সুবিধা পেতে সহায়তা করতো? যা তিনি পেতে চাইতেন!

তা হতে পারে পেশাগত সুবিধা, আর্থিক সুবিধা কিংবা সামাজিক সুবিধা অথবা অন্য কিছু?

প্রত্যন্ত একটি গ্রামের সাধারণ মেয়ে বৃষ্টি খাতুন, ঢাকায় পড়াশোনা করতে এসে কেনো এবং কীভাবে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হয়ে গেল? কারা এর পেছনে অনুঘটক, জানাটা জরুরি। রাষ্ট্রের স্বার্থেই আমাদের জানতে হবে, কী সেই কারণ?

মেয়েটির বাড়ি যে গ্রামে, সেই গ্রামে ও তার আশেপাশের গ্রামে আমার কিছু পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। সেই হিসেবে একসময় ওখানে আমার বেশ যাতায়াত ছিল। আমি ইতোমধ্যেই ওখানে ফোন দিয়ে মেয়েটির বাবার খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীর সূত্রে নিশ্চিত হয়েছি যে, এই মেয়েটি বৃষ্টি খাতুন। এলাকার সবাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

তবে মেয়েটি কেনো তার নাম, মায়ের নাম ও দেশের নাম পরিবর্তন করে পরিচয় দিতো- এটা তারা কেউ বুঝতে পারছে না। ইতোমধ্যেই ওই বাড়িতে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছেন। তারাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

সবরকম যুক্তির কাউন্টার হিসেবে বিষয়টি উল্টো ভাবেও দেখা যেতে পারে। একটি মুসলিম মেয়ে হিন্দু পরিচয় দিয়ে মন্দিরে যাতায়াত করছে, হিন্দুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ঝুঁকিটা কিন্তু তাদের দিক থেকেই বেশি। সেটাও বিবেচনায় রাখা উচিত। অর্থাৎ আমরা যখন কোনো সমাধানে পৌঁছাতে চাইবো, তখন সম্ভাব্য সব যুক্তি একসাথে অন বোর্ড করতে হবে। তাহলেই সঠিক সমাধান পাওয়া সম্ভব!

লেখক- সহকারী সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব এবং সম্পাদক, পার্বত্যনিউজ।

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ