বিশ্বে বহুল পরিচিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। শহিদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম এই বাংলাদেশের মূল শক্তি এদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণ। বাঙালি জনগণ সব সময় সত্য, সুন্দর ও স্বাধীনতার পক্ষে। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে।
গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যারা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারাই শুধু এখন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে জনগণের সমর্থন নিয়ে টিকে আছে। অপরদিকে যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের রাজনীতিতে লিপ্ত তারা শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নয় বরং পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে যুগে যুগে হারিয়েছে নিজেদের অস্তিত্ব।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসে নিজেদের অপকর্মের ফলে যুগে যুগে জনসমর্থন হারিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারানোর মতো দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত অন্যতম।
বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে নিজেদের অপকর্ম এবং বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে বিএনপি-জামায়াত অতীতে যে ধরনের জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে তা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলস্বরূপ, বিএনপি-জামায়াত এখন বাঙালি জনগণের সমর্থন হারিয়ে জনবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন হারিয়ে পুরোপুরি বন্ধুহীন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তাদের আশেপাশে এখন বাঙালি জনগণ কিংবা বিদেশি শক্তি কেউ নেই।
গণতন্ত্রের নামে আগুন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পক্ষে এদেশের সাধারণ জনগণ কখনো ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। বাংলাদেশের জনগণ যখন যেভাবে যেরকম চেয়েছে আওয়ামী লীগ সেভাবেই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। সোনার বাংলার সোনার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুকৌশলী এবং জাদুকরী নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ গত ১৫ বছর পূর্বের বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ‘রূপকল্প-২০২১’ একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দিন বদলের সনদ জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। এই দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরে বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করে ভিশন-২০৪১, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সাফল্যের মূলে রয়েছে শেখ হাসিনার ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্ব।
যার ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কল্যাণার্থে দীর্ঘ এ পথচলায় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। প্রতিনিয়ত বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নানাবিধ ষড়যন্ত্র, হরতালের নামে জ্বালাও-পোড়াও, বিডিআর বিদ্রোহ, হোলিআর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলাসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে এবং হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।
শত বাধা অতিক্রম করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব ক্ষেত্রেই অসামান্য সাফল্য এসেছে। আর এ অসামান্য সাফল্যের পেছনে ছিল জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা যা কখনো বিএনপি-জামায়াত পায়নি।
এদিকে জনগণের সমর্থন ও ভোটে নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর অভিনন্দন বার্তা বিএনপিকে আরও বেশি হতাশায় ফেলে দিয়েছে। এতদিন যে বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে বিএনপি-জামায়াত পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল নবনির্বাচিত সে আওয়ামী লীগ সরকার বরাবর তাদের অভিনন্দন বার্তা বিএনপি-জামায়াতকে আরও বেশি একা করে দিয়েছে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা বরাবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি, নবনির্বাচিত আওয়ামী সরকারকে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিনন্দন বার্তার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সম্পূর্ণভাবে বিদেশি বন্ধুহীন দলে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও গত ১৫ বছর বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে থেকে বিএনপি এমন কোনো কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড সামনে আনতে পারেনি যাতে তারা প্রতিবেশীসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
বরং তাদের নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, বিএনপিকে নিয়ে ভীত হয় এমন কাজই তারা করছে। যেমন ইন্ডিয়া ও আমেরিকা বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেক্ষেত্রে গত ১৫ বছরে বিএনপি বারবার প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাঁচিয়ে রেখেছে। বিএনপি যদি দেশের তরুণদের দাবি মেনে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে সমর্থন করত তাহলে আজ বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যে অস্তিত্ব আছে সেই অস্তিত্ব থাকত না।
যুদ্ধাপরাধীর বিচারে যখন গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠেছিল বিএনপি যদি এর বিরোধিতা না করে সমর্থন দিত তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি ভিন্ন হতো, বিএনপির রাজনীতিও ভিন্ন হতো। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ চিরতরে দূর হতো। প্রতিবেশী দেশ ভারত আর বিএনপিকে নিয়ে কোনো শঙ্কাই থাকত না। এখন বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই প্রতিবেশী দেশ ভারত শঙ্কিত হয়ে ওঠে। তাদের ভিতর শঙ্কা জাগে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে আবার জামায়াতে ইসলামী ও তাদের জঙ্গি সংগঠনগুলো অবাধে কাজ করবে বাংলাদেশে। তখন দেখা যাবে, বাংলাদেশে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি করে সেখানে ট্রেনিং নিয়ে জঙ্গিরা আজ ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করছে তো কাল কলকাতায় আমেরিকান ডেপুটি মিশনে হামলা করছে আর পরশু বোম্বের কোনো হোটেলে হামলা করছে। এ ভয়েই ভীত হয়ে পড়ে ভারত।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গিরা অবাধে কাজ করার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তানে পরিণত হওয়া। ভারত সব সময়ই সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, তাদের আরেক পাশে যেন আরেকটি পাকিস্তান না থাকে। এ কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী যে কোনো শক্তি তা আওয়ামী লীগ বা তার জোট হোক আর সিপিবি বা তার জোট হোক এমন একটি শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে ভারত।
শুধু বর্তমান সময়েই নয় বরং অতীত ইতিহাস বলছে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই চীন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিশেষ মৈত্রীর সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছিল বিএনপি। তবে সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। উল্টো বন্ধুসুলভ দেশগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, যার উন্নতি এখনো হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে ‘বিএনপি’ শব্দটাকেই নতুন করে বহির্বিশ্বের কাছে চেনাতে হয়েছে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্যদের। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, দল পুনর্গঠন এবং আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
ফলে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও বেশ করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বিএনপিকে চিনতে পারছে না রাষ্ট্রগুলোর কোনোটিই। আরও জানা যায়, গত নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল ভারতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। এরপর থেকে এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর নতুন করে যোগাযোগ করার সাহস পায়নি এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াত। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত সবাইকে হারিয়ে এই বিএনপি-জামায়াত এখন পুরোপুরি আন্তর্জাতিক বন্ধুহীন দলে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের সমর্থন ও ভোটে পুনরায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের এই দীর্ঘ শাসনামলে বাঙালি জনগণ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তথা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। আজ বাংলাদেশ ও বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের পথে, মানবাধিকারের পথে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও করে বাংলাদেশকে ধ্বংসের যে নীলনকশা এঁকেছিল তা কোনোদিনও বাস্তবায়ন হবে না। সাহসী বাঙালি জনগণ তা কখনো হতে দেবে না।
গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বিএনপি-জামায়াত মহাসমাবেশ, হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচির নামে তারা যত বেশি জ্বালাও-পোড়াও করেছে ততই তাদের জনবিচ্ছিন্নতা বেড়েছে এবং আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসমর্থন বেড়েছে। বিএনপি যত মানুষ হত্যা করেছে তার চেয়ে বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। এর ফলে জনগণের সমর্থনে টানা চারবারের মতো বিজয়ের হাসি আওয়ামী লীগ হাসতে পেরেছে।
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, জনসমর্থন ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো লাশের রাজনীতি চায় না। এর বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছের বাহিরে গিয়ে কিছু বিদেশি শক্তির মিথ্যা আশ্বাসে জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যার মতো অগণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বাড়িয়েছে জনবিচ্ছিন্নতা এবং হারিয়েছে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন। এখন এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জনগণ কিংবা বিদেশি শক্তি কেউ নেই। এ একাকিত্বকে সঙ্গী করেই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে অস্তিত্ব হারিয়ে বিলীনের পথে এই বিএনপি-জামায়াত- এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব)
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ