বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তির নায়ক, আর তার কন্যা শেখ হাসিনা ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকপাল’। শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, নারীর ক্ষমতায়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্ব নেতৃত্বকে চমকে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদও। তার সুচিন্তিত উন্নয়নের কৌশলকে তিনি অবিভাজ্য নীতিতে বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন। এখন শেখ হাসিনার প্রযুক্তিনির্ভর ‘উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে, যা ‘শেখ হাসিনা উন্নয়নের দিকপাল’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভেবেছেন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর জনগণকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে না পারলে তা ব্যর্থতে পরিণত হবে। কারণ জনগণ যদি অর্থের ব্যবহার তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা লাভজনক চিন্তায় বিনিয়োগ করতে না পারেন তাহলে সে অর্থ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে না।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। আগে যেখানে খাদ্য উৎপাদন ছিল এক কোটি টন, সেখানে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন দাঁড়িয়েছে চার কোটি টন। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি একযুগ ধরে গড়ে প্রায় ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ আট দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০২০ সালেই দেশের মাথাপিছু আয় প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭২ সালে যেখানে দেশের জিডিপির আকার ছিল আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে ২০২২ সালে মোট জিডিপির আকার ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, সেখানে ২০১৯ সালে তা কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে। বর্তমানে চরম দারিদ্র্যের হার ছয় শতাংশের নিচে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫০ বছরের নিচে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জীবনমানের উন্নতির ফলে ধাপে ধাপে গড় আয়ু বেড়ে বছরে ৭৩ দশমিক ৪-এ উন্নীত হয়েছে। শুধু যে গড় আয়ু বেড়েছে তা নয়, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৭৩-এ দুই দশমিক সাত থেকে কমে ২০২২ সালে এক দশমিক দুই শতাংশে নেমেছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৯ শতাংশ। শিক্ষার হার ২০১১ সালের ৫১ দশমিক সাত থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল চার হাজার ২০০ মেগাওয়াট। ১৪ বছরের কম সময়ে দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ২০২২ সালে বিদ্যুৎ সক্ষমতা বেড়ে প্রায় ২২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।
বর্তমানে দেশে ১০ থেকে ১২টি মেগা প্রকল্প চলমান। ২০২২ সালের জুনে দেশে সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। ঢাকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ আরও কয়েকটি বৃহদাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের অবকাঠামোগত অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও সাহস প্রশংসনীয়। বিপুল খাদ্য ঘাটতির দেশটি আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই শুধু অর্জন করেনি, সাহায্যনির্ভর দেশটি খাদ্য রপ্তানি করার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সময়োপযোগী কৃষি নীতির কারণে বাংলার কৃষকরা খাদ্যপণ্য উৎপাদনে জাদু দেখিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মিলেছে মধ্যম আয় ও উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে মহাকাশে ভাসছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করছে প্রধানত তিনটি খাত। কৃষি, তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্স। একসময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে ‘ইমাজিং টাইগার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া তো দূরের কথা, সারের দাবিতে ১৮ কৃষককে জীবন দিতে হয়েছিল। ধান উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে শাকসবজি, মাছ ও ফল-ফলাদি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ। বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ সবজি, ধান ও আলু উৎপাদনে বিশ্বে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম। এ ছাড়াও মাছ, আম, পেয়ারা উৎপাদনে চতুর্থ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান প্রায় ১৬.৬।
এখন লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বেশ কিছু খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে পোশাক খাতের বিশ্বব্যাপী বাজার সৃষ্টি করা, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ ও ওষুধের উপাদান, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল ও যানবাহন তৈরি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি ও কৃষিপণ্য আধুনিকীকরণসহ ৩২ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার।
রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র্যের হার আরও কমে আসবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ এখন ৪২তম রপ্তানিকারক ও ৩০তম আমদানিকারক দেশ। অগ্রসরমাণ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, ওপরে আছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে এসে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছিলেন, ‘শুধু বলার জন্য নয়, দারিদ্র্য বিমোচনে সত্যিই আজ বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মুক্তির দিকপাল একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতির উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল করতে শেখ হাসিনাই বাস্তবতার নিরিখে সক্ষম হয়েছেন। প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অর্থ একসঙ্গে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।
আর যখন তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তখনই উন্নয়নের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এটি উন্নয়নের রাষ্ট্র মডেলের সঙ্গে সাদৃশ্য। আগামী দিনে এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সমন্বিত কর্মসূচি যুগপৎভাবে সম্পাদিত হলে সারা বিশ্বে ‘শেখ হাসিনা উন্নয়নের দিকপাল’ হিসেবে অনুকরণীয় ও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ